ঢাকা শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতজানু কূটনীতির দিন শেষ

থাইল্যান্ড থেকে সাফল্যের ঝুলি নিয়ে ফিরলেন ইউনূস
নতজানু কূটনীতির দিন শেষ

দেশের ক্রান্তিকালে হাল ধরে একের পর এক বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের আর্থিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নসহ বহুল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দঁাঁড়িয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণের পর দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিধর চীন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের বেশকিছু এজেন্ডা তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেক জোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর চার দিন দেশে কোনো সরকার নেই, দেশের পরিস্থিতি যখন টালমাটাল, ঠিক সেই মুহূর্তে ৮ আগস্ট রাতে ৮৪ বছর বয়সে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে চমক দেখান ড. ইউনূস। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ১৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের আর্থিক, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচারব্যবস্থাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। সংস্কারের পাশাপাশি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। ব্যাঙ্ককে সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যাহ্নের পর আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে তারা দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠক করেন। দুই নেতার বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো ইস্যু ছিল, সব নিয়ে কথা হয়েছে।

আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো বিষয় ছিল, সব বিষয়েই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। যেমন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা হয়েছে। শেখ হাসিনা যে ওখানে (ভারতে) বসে ইনসিন্ডিয়ারে (হিংসাত্মক) কথা বলছেন সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা হয়েছে। গঙ্গার পানিচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, নতুন করে সেটা করা নিয়ে কথা হচ্ছে। তিস্তার পানিচুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে। গত বছর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়।

হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না : নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক পোস্টে শফিকুল লিখেছেন, ‘যখন অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেন, তখন মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। আমরা আশাবাদী, শেখ হাসিনা একদিন ঢাকায় প্রত্যর্পণ হবেন এবং আমরা শতাব্দীর সেরা বিচার দেখব।’ বৈঠকে মোদি অধ্যাপক ইউনূসের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলেও জানান শফিকুল। তিনি আরও বলেন, আলোচনার পুরো সময়জুড়ে মোদি ইউনূসের প্রতি অত্যন্ত সম্মান দেখিয়েছেন। শফিকুল ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মোদির দেয়া আলাপ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বৈঠকে তিনি (মোদি) বলেছেন যে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্ক থাকলেও, ‘আমরা আপনার (ইউনূস) প্রতি তার অসম্মানজনক আচরণ দেখেছি। তবুও আমরা আপনাকে সবসময় সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে গেছি।’ শফিকুল আরও লিখেছেন, ‘বৈঠকে এটা স্পষ্ট ছিল, ভারত বাংলাদেশকে ঘিরে এক নতুন কূটনৈতিক পথ খুঁজছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসকে একাধিকবার বলেন, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়!’ ‘গত কয়েক মাসে একাধিকবার প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে ‘সর্বোত্তম সম্পর্ক’ চাই। তবে সেটা হতে হবে ন্যায়বিচার, সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে!’

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের অচলাবস্থা দৃশ্যত কাটছে : ভারতের আশীর্বাদপুষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুতির পর শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের কিছুটা ভাটা পড়েছিল। সেই ভাটা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তি সইসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত উদ্বেগ জানিয়েছে। দিল্লি আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে ভারত এমন এক গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে নির্বাচনের একটি ভূমিকা রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারতের তার প্রতি আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে আসছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে তিনি আপনার দেশে থাকাকালীন এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’

সেভেন সিস্টার্স ইস্যু জোরালো : গত ২৬-২৯ মার্চ পর্যন্ত চীন সফর করেন অধ্যাপক ইউনূস। সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এর মধ্যে ২৮ মার্চ বেজিংয়ের ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল’ এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক সংলাপে ড. ইউনূস বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি এ সময় বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাণিজ্য ও ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, যা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত, তা স্থলবেষ্টিত। তাদের সমুদ্রে কোনো অ্যাকসেস নেই। আমরাই এই গোটা অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটা একটা বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এটা চীনের অর্থনীতির প্রসারের একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে, যেখানে তারা পণ্য তৈরি করতে পারে, বিপণন করতে পারে... চীনে পণ্য নিয়ে এসে সারা বিশ্বে তা বেচতে পারে’। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার রেশ এখন বেইজিং আর দিল্লি ছাড়িয়ে আছড়ে পড়েছে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চেও। সেভেন সিস্টার্স হিসাবে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে আঞ্চলিক সংগঠন বিমসটেকের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারত বা ভারতের কোনো অংশই যে ‘স্থলবেষ্টিত’ নয়, তা বোঝাতে বিমসটেকের প্ল্যাটফর্ম থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে লম্বা উপকূলরেখা; কিন্তু ভারতেরই। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরেও উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘অ্যাকসেসে’র পথ প্রশস্ত হতে চলেছে বলে তিনি দাবি করেন।

মিয়ানমারে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন : বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নেবে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিয়েছে মিয়ানমার। আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ছবি ও নাম মিলিয়ে দেখার কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছয়টি ধাপে এই মূল তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিউ এই তথ্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে জানান। এই প্রথম মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি নিশ্চিত প্রত্যাবর্তনের তালিকা প্রদান করল, যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

বিমসটেকের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস : আগামী দুই বছরের জন্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত শুক্রবার বিকেলে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে এ দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি মিলেছে : বিমসটেক সম্মেলনে ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগ, বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্রমণি পান্ডে এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইস্যু নিয়ে বিমসটেক সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনটি হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কারের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়গুলোই আমাদের পরিকল্পিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলেই আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব। ড. ইউনূস বলেন, সরকার এরই মধ্যে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে আমরা সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছি। এ ছাড়া গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং নারী অধিকার সংক্রান্ত নীতিগত সুপারিশ দেয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চারটি কমিশন গঠন করেছে।

চট্টগ্রাম-কুনমিং ফ্লাইট চালু : চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করতে বন্দরনগর চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। তবে চড়া বিমানভাড়া শহরটিতে ভ্রমণের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম-কুনমিং রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমে আসবে।

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান : বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। গত ২৯ মার্চ এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার হাতে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গং কিয়ান বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস শুধু একজন অর্থনীতিবিদ নন, তিনি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রপথিক।’ তিনি চীনের তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের হাতেই ভবিষ্যৎ। নতুন চিন্তাভাবনা, নতুন উদ্যোগ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তোমরা বিশ্বকে বদলে দিতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের বড় স্বপ্ন দেখার বার্তা : বিশ্বকে বদলে দিতে শিক্ষার্থীদের বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। শনিবার বেইজিংয়ে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে এ কথা বলেছেন চীন সফররত ইউনূস। তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র শেখার জায়গা নয়, এটি স্বপ্ন দেখারও জায়গা। স্বপ্ন দেখতে পারার ক্ষমতা পৃথিবীর ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ বর্ণনা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, তবে তা ঘটবেই। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে তা কখনও ঘটবে না। যা কিছু ঘটেছে, কেউ না কেউ আগে তা কল্পনা করেছিল! কল্পনা যে কোনো কিছু থেকে বেশি শক্তিশালী। তিনি শিক্ষার্থীদের অকল্পনীয় বিষয়ে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন। মানবসভ্যতার যাত্রা হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা। সেটাই আমাদের কাজ। আর আমরাই তা করতে পারি। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইউনূস দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিপূরকতা এবং তাদের বিশাল সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। তিনি আশা করেন, আরও চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে একত্রে একটি ‘বৃহত্তর বাজার উন্মুক্ত’ করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত