ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আশাবাদী প্রেস সচিব

হাসিনাকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণ করবে ভারত

হাসিনাকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণ করবে ভারত

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বৈঠকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছেন বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুটি উত্থাপনের সমায় নেতিবাচক ছিলেন না মোদি; যা দেখে আশাবাদী প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তার বিশ্বাস, হাসিনাকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণ করবে ভারত। ইউনূস-মোদির বৈঠক নিয়ে দেয়া এক ফেসবুক পোস্টে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান তিনি। পোস্টে প্রেস সচিব বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি তার কাজের প্রশংসা করেন। বৈঠকে তিনি যা বলেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকাকালীন, ‘আমরা আপনার প্রতি তার অসম্মানজনক আচরণ দেখেছি। কিন্তু আমরা আপনাকে সম্মান জানিয়েছি।’ আর যখন অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেন, তখন প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। আমরা নিশ্চিত যে হাসিনাকে একদিন ঢাকায় প্রত্যর্পণ করা হবে এবং আমরা শতাব্দীর বিচার দেখব!

এছাড়াও এটা বেশ স্পষ্ট ছিল যে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করতে চায়। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসকে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন যে ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে, কোনো একক দল বা ব্যক্তির সাথে নয়! যেমন অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকবার বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে ‘সর্বোত্তম সম্পর্ক’ চাই। তবে তা ন্যায্যতা, সমতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে হতে হবে!

অপর এক পোস্টে দেশের বর্তমান কূটনীতির সাফল্য তুলে ধরেছেন প্রেস সচিব। বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির কাছে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও তিস্তার পানির ন্যায় হিস্যা চেয়েছে বাংলাদেশ। যা কূটনীতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বড় অগ্রগতি হয়েছে এই সফরে। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। যা এই সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য। সরকারের কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আসার পেছনে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান।

জাতিসংঘে কাজ করা এই কূটনীতিক বাংলাদেশের কূটনীতিতে যে বড় পরিবর্তন এনেছেন তা জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দেয়া দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে। যেখানে বাংলাদেশের শক্ত কূটনীতি ও ড. খলিলুর রহমানের প্রশংসা করেছেন তিনি। শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ড. খলিলুর রহমান একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ। তিনি ছিলেন জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে প্রথম বিসিএস নিয়োগপ্রাপ্ত। কয়েক মাস আগে যখন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করেন, তখন আমি তার সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতাম না। যদিও আমরা বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলাম এবং সাক্ষাৎ ছিল অগণিত।’

তিনি আরো লিখেন, ‘তবুও, কয়েক মাসের মধ্যে তিনি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ব্যাপক গতিশীলতা সঞ্চার করেছেন। জাতিসংঘ প্রধানকে একটি স্মরণীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইফতার সফরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এমনকি অধ্যাপক ইউনূস তাকে একটি ধন্যবাদ পত্রও দিয়েছেন।’ চীন ও ব্যাংকক সফরের স্মৃতি টেনে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘চীন এবং ব্যাংকক ট্যুরে আমি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি।

যা খুব আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা ছিল- যার কিছু অভিজ্ঞতা শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের পরেই লেখা সম্ভব। শাংরি-লা হোটেলে বিমসটেকের সরকারী নৈশভোজে আমরা যখন সুস্বাদু থাই খাবার খেতে ব্যস্ত তখন তিনি আমাদের কূটনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য তার পুরো সময় ব্যয় করেছিলেন।’ খলিলুর রহমানের ভূমিকার কথা জানিয়ে তিনি আরো লিখেন, ‘প্রথমে তিনি মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। তারা ১৫ মিনিট ধরে কথা বলেন। তারপর তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে পুরো এক ঘণ্টা কথা বলেন এবং খাবার খান। স্পষ্টতই এগুলো ছিল অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। কিন্তু মাঝে মাঝে এই আলোচনায় কিছু দীর্ঘ তালাবদ্ধ দরজা খুলে যায় এবং আপনি গতকাল যার ফলাফল দেখতে পেলেন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান তুলে ধরে শফিকুল আলম লিখেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী কূটনৈতিক দল রয়েছে, যার নেতৃত্বে আর কেউ নন, অধ্যাপক ইউনূস। তিনি তিক্ত এবং কঠিন বিষয় উত্থাপন করতে কখনও পিছপা হন না। তিনি এফডিআই আকর্ষণের ক্ষেত্রে দেশের সিইও এবং প্রধান বিপণন কর্মকর্তাও এবং তারপরে আমাদের তৌহিদ হোসেন আছেন, যিনি তার মনের কথা বলেন। দলে ড. খলিলের অন্তর্ভুক্তি মেকআপে কিছুটা শক্তি যোগ করেছে।’

বাংলাদেশ আগের সেই নতজানু কূটনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে বলেও জানান শফিকুল আলম, ‘বাংলাদেশ ভীতু এবং নতজানু কূটনীতির জন্য পরিচিত ছিল। বহু বছর ধরে আমাদের কূটনীতিকরা কঠিন বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো মেনে নিতেন। তা আর নয়!’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত