ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন ইউনূস

মার্কিন শুল্ক ইস্যু নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক
শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন ইউনূস

বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বাড়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে গতকাল শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই দেশটির প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টা করা হবে। শুল্ক বাড়ানো আকস্মিক বিষয় নয়। এতে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তৈরি পোশাক খাত ক্ষতি হবে না, বরং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, শুল্ক কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে, ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশায় আছে বাংলাদেশ।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া রয়েছেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আজকের আলোচনার পর এমন একটি সিদ্ধান্ত আসবে, যাতে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে আরও বাড়বে, কমবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে বৈঠকে করেন উপদেষ্টা আশিক চৌধুরী। এসময় রফতানিকারকদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, কারণ তারাই (ব্যবসায়ীরা) তো এক্সপোর্ট করেন। তাদের পরামর্শগুলোই বৈঠকে বিশ্লেষণ করা হয়। চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই সরকার ব্যবসাবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত, এই পদক্ষেপ আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। অবস্থান শক্তিশালী করতে আগামী পরশু একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে চীনের বিনিয়োগকারীরাও অংশগ্রহণ ও ব্যবসা খোলার আগ্রহ দেখিয়েছেন। নতুন গ্লোবাল ট্রেড অর্ডারে আমরা আরও বেশি উপকৃত হবো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে এতদিন গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। একইভাবে আরও অনেক দেশের পণ্যের ওপরও শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্কহার নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে এতদিন গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। একইভাবে আরও অনেক দেশের পণ্যের ওপরও শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস প্রকাশিত তালিকায় দাবি করা হয়, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে। এর বিপরীতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ ধার্য করে ট্রাম্প প্রশাসন। ওই তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, তাইওয়ানে ৩২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডে ৩১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ শতাংশ, জাপানে ২৪ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, ইসরায়েলে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১০ শতাংশ করে শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত