ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াকফ বিল পাসের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এই বিল আইনে পরিণত হয়ে বাস্তবায়িত হলে ভারতের মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ওয়াকফ সম্পত্তির বড় অংশ মুসলিমদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের মধ্য কলকাতার ধর্মতলা এবং দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাসে বড় জমায়েত ও বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। ওয়াকফ বিল-বিরোধী পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিয়েছেন। পার্ক সার্কাসের বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, ‘হিন্দুদের যেমন দেবোত্তর সম্পত্তির ট্রাস্ট রয়েছে, তেমনই মুসলমানদের জন্য রয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তির ট্রাস্ট। এখন একটি ধর্মের ট্রাস্ট থাকবে এবং অন্য ধর্মের ট্রাস্ট খারিজ হয়ে যাবে, এটা কীভাবে মেনে নেয়া সম্ভব?’ গুজরাটের আহমেদাবাদে রাস্তায় নামেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। ওয়াকফ সংশোধনীর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবীণরা রাস্তায় বসলে তাদের জোর করে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে গুজরাট পুলিশ। এরপর পুলিশের ওপর হামলা করেন বিক্ষোভকারীরা। চেন্নাইয়ে রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয় অভিনেতা বিজয়ের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল তামিলাঙ্গ ভেত্তরি কাঝাগাম বা টিভিকে। টিভিকে কর্মীরা শুধু চেন্নাই নয়, তামিলনাড়ুর অন্যান্য বড় শহরেও বড় জমায়েত করেন। আন্দোলনের ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়ে কোয়েম্বাটোর এবং তিরুচিরাপল্লির মতো শহরেও। বিক্ষোভকারীরা সমবেতভাবে স্লোগান তোলেন, ‘ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার করুন’, ‘মুসলমানদের অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না।’ ওয়াকফ বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, বাংলার মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে দেবেন না তিনি।
খবরে বলা হয়, ২০ কোটির বেশি মুসলিমের বসবাস ভারতে। এই দেশে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। এ সব সম্পত্তিতে ৮ লাখ ৭২ হাজারের বেশি স্থাপনা রয়েছে, যাতে জমির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার হেক্টর বা ১০ লাখ একর। প্রতিটি রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ বোর্ড এ সব সম্পত্তি দেখাশোনা ও পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া রয়েছে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড। বছরের পর বছর ধরে ওয়াকফ আইনে ওয়াকফ বোর্ড এ সব সম্পত্তির সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার পুরো ক্ষমতা এই বোর্ডের। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে বুধবার লোকসভায় এবং বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করে। মুসলিম ও বিরোধীরা এই বিতর্কিত সংশোধনীর বিরোধিতা করলেও পাত্তা দেয়নি বিজেপি। এই বিল পাসের পর ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নজিরবিহীনভাবে সরকারের হাতে চলে যেতে পারে।
বিজেপির প্রধান বিরোধী কংগ্রেস ওয়াকফ বিলের তুমুল বিরোধিতা করেছে। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। কংগ্রেসের এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, বিজেপি সরকারের নেতৃত্বে যে ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে তা সুপ্রিমকোর্টে চ্যালেঞ্জ করবে তার দল। সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভার দলীয় নেতা মোহাম্মদ জাভেদ সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন। একই দিনে মামলা করেন এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তারা দুজনেই ওয়াকফ বিল নিয়ে গঠিত সংসদের যৌথ কমিটির (জেডিসি) সদস্য ছিলেন। সেই সঙ্গে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, এই আইনের বিরুদ্ধে তারা দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করবে।
ওয়াকফ বিল সমর্থন করায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে ৫ নেতা দল ত্যাগ করেছেন। ওই ৫ নেতার মধ্যে ৪ জন মুসলিম হলেও একজন হিন্দু। রাজু নায়ার নামে ওই হিন্দু নেতা তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘দলের ভূমিকায় আমি হতাশ। এটি আরেক কালা আইন। মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও অবিচার এতে আরও বাড়বে।’ বিহারে জেডিইউতে অসন্তোষ আগামী দিনে জোরাল হয়ে উঠতে পারে। এই বছরের শেষে ওই রাজ্যে বিধানসভার ভোট। জেডিইউ মুসলিম ভোট না পেলে তা নিশ্চিতই বিরোধী শিবিরে জমা পড়বে। তাতে বিজেপির ক্ষতি কতটা হতে পারে, সেই হিসাব কষতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল।