ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আসছে বিশ্বের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ও ব্র্যান্ডগুলো

আসছে বিশ্বের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ও ব্র্যান্ডগুলো

দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে আজ থেকে চার দিনব্যাপী ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ও ব্র্যান্ডগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা খুবই আগ্রহী। তিনি নিজেই চেয়েছিলেন বিদেশি বড় বড় বিনিয়োগকারী যারা আসবেন (চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে) তাদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশসহ অর্ধশতাধিক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সাড়ে ৫ শতাধিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া সম্মেলনে পাঁচজন বিনিয়োগকারীকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেয়া হবে। পাশাপাশি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সঙ্গে একটি বেসামরিক চুক্তি হতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে ইচ্ছুক একটা বড় অংশ যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, আমরা এবার তাদের স্থান দিতে পারিনি। সেজন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছি বিদেশি যারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন এখানে এবং অনিবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) যারা। সেটা করতে গিয়ে বাংলাদেশি অনেককেই আমরা জায়গা দিতে পারিনি। মূল অনুষ্ঠানে আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীর কথা শুনবো।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বক্তৃতা করবেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একটা বড় বিনিয়োগ আসে আমাদের এখানে। তারা সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন, সেটা আমরা শুনব। প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পাঁচটি পুরস্কার দেয়া হবে। একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, পরিবেশগত, সামাজিক এবং শাসন (ইএসজি) ক্ষেত্রে আমরা একটি সংস্থাকে সম্মাননা দেব, একটি পুরস্কার দেয়া হবে উদ্ভাবনীর জন্য। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের সঙ্গে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে অনেক বিদেশি নাগরিক আছেন, এরকম একজনকে আমরা সম্মানিত নাগরিকত্বের অফার করব।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, সম্মেলনে অনেক সমঝোতা স্মারক সই হবে। বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। আইএলও’র সঙ্গে শ্রম বিষয়ে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার চিন্তা করছি। আমরা নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার কথা চিন্তা করছি। বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধান নিয়ে এই চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি সই হওয়ার পর আমরা এর বিস্তারিত জানাতে পারব।

তিনি আরও বলেন, যাদের সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হবে তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) সংশ্লিষ্ট এক সংস্থা এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য একটি কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে বছরের পর বছর কাজ করছেন এমন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা পুরস্কারের পাশাপাশি অনারারি সিটিজেনশিপ অফার করা হবে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীদের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও’র সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ৯ এপ্রিল বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া সারা দিনই একাধিক (তিন-চারটা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শিল্প কারখানায় সংঘাতের পর বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের দুয়ার খুলতে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল চার দিনব্যাপী রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে। সামিটের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা।

এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরাও এ সামিটের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত