বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক খাত ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, ১০ জনের মতো সচিব এবং বড় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাছে এবং অন্য চিঠি বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ইউএসটিআরের কাছে পাঠানো হবে।
চিঠিতে কী লেখা থাকবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিঠিতে কী কী থাকবে, কি ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে। আজকে চারজন উপদেষ্টা ছিলেন, একজন হাইলি রিপ্রেজেন্টার ছিলেন, একজন স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর, আমাদের প্রায় ১০ জনের মতো সেক্রেটারি ছিলেন, যারা বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্য থেকে চারজন প্রতিনিধি ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, চিঠিতে যাই থাকুক- সেটা আমাদের ব্যবসাবান্ধব হবে। আমাদের বাংলাদেশের ব্যবসার স্বার্থটা দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্পিটিটিভ যেসব কান্ট্রি আছে তাদের চেয়ে আমরা আরো ব্যবসাবান্ধব হব, এই চিঠিটা হবে। আরো বেশি ব্যবসাবান্ধব হবে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দুই পক্ষের জন্যই উইন উইন সিচুয়েশন হয় এবং আমাদের জন্য মার্কেট এক্সেসটা যেন আরো বাড়ে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর লার্জেস্ট মার্কেট, সেখানে আমাদের আরো অনেক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করার সুযোগ আছে। যেটা আমাদের উপদেষ্টারা এবং ব্যবসায়ী নেতারা আজকে বললেন।
এর আগে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া রয়েছেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা। বৈঠক শেষে ড. খলিলুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে ভয় পাওয়া ও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি আকস্মিক নয়, আমরা এজন্য প্রস্তুত। আমরা শিগগির কিছু ব্যবস্থা নেব, সেটা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করেই নেব।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিষয়টি আমাদের জন্য আকস্মিক কোনো বিষয় নয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পেরেছেন। সেই সূত্রে আমি নিজে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আমেরিকান পররাষ্ট্র দপ্তর, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ, ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রমাগত এ বিষয়ে আলোচনা করে আসছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে এতদিন গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। একইভাবে আরও অনেক দেশের পণ্যের ওপরও শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস প্রকাশিত তালিকায় দাবি করা হয়, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে। এর বিপরীতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ ধার্য করে ট্রাম্প প্রশাসন।
ওই তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, তাইওয়ানে ৩২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডে ৩১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ শতাংশ, জাপানে ২৪ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, ইসরায়েলে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১০ শতাংশ করে শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।