ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল দ্য জেনোসাইড স্টপস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এসময় নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারসহ গাজায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ফিলিস্তিনে ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে ছাত্রদল সেটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যারা রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সাধুবাদ জানাই।
রাকিব বলেন, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) যে বা যারা বাটা, কেএফসি ও পিজ্জা হাটে হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা জানাই। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। যারা অনলাইনসহ বিভিন্ন জায়গা মব জাস্টিসের সূচনা করে তাদের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বর্তমান নির্দলীয় সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা এসব মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ফিলিস্তিনের শান্তিকামী মুসলমানরা নিজেদের আবাসভূমি স্থায়ী করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলের সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছে। যার অর্ধেক নারী ও শিশু। এরকম ধংসযজ্ঞ চলার পরেও যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিবাদ জানাননি তাদের প্রতি ধিক্কার।
ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে বকুল বলেন, আজ জাতিসংঘসহ সব মানবাধিকার সংগঠন নিশ্চুপ। গাজায় সর্বোচ্চ মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও তাদের কোনো প্রতিবাদ নেই। আজ থেকে যেখানে আমরা ইসরায়েলি পণ্য পাব সেখানেই বয়কট করব। আজ যদি সারা বিশ্বের মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। এসময় তিনি বিশ্বের সব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ জেগে উঠেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার আওয়ামী লীগ পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েল ব্যতীত সব রাষ্ট্র গমনের যে নির্দেশনা ছিল, সেখান থেকে ইসরায়েল নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী, ইসলাম বিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষীরাই ইসরায়েলপন্থিদের সমর্থক ছিল। আমরা পত্রিকা থেকে যে পরিসংখ্যান পেয়েছি, ৫০ থেকে ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনবাসী যারা হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই পরিসংখ্যানের চেয়েও আরো বেশি ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা বাংলাদেশ ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করব তার মানে এই নয় যে, আমরা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করব। বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের ব্যর্থতা এখানে লক্ষ্যণীয়। তাদের উচিত ছিল আগে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা। তা না হলে বাংলাদেশের নামে এই বদনামটা দিতে হতো না। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণহত্যার বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার নয়, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমেরিকার মার্কিন বাহিনীর মদদ যোগাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। মুসলিম বিশ্বের যারা মোড়ল তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা সারা পৃথিবীতে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়ান। আমরা অবিলম্বে ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় গণহত্যা বন্ধ চাই।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাস অভিমুখে জবির লং মার্চ কাল : গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দূতাবাস অভিমুখে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ কর্মসূচি পালন করবেন। ওই সময় দুই দূতাবাসে স্মারকলিপিও দেয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, মানুষ হওয়াই যথেষ্ট। ফিলিস্তিনের প্রতি ন্যায়বিচার ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের মুক্তির লক্ষ্যে আমরা লংমার্চের উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্ববাসীকে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেসেজ দেব এবং শান্তিপূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি দূতাবাসে স্মারকলিপি দেব।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে চোখের পানি ঝরানো ছাড়া আমরা আর কিছুই করতে পারছি না। একজন মুসলমান হিসেবে আমরা অবশ্যই মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়াব।’
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ, শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।