ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হত্যাচেষ্টা মামলায় তুরিন চার দিনের রিমান্ডে

হত্যাচেষ্টা মামলায় তুরিন চার দিনের রিমান্ডে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে এই আদেশ দেন। গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার তুরিন আফরোজকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার হাকিম আদালতে নিয়ে আসা হয়। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সুমন মিয়া।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড শুনানি করেন। তবে তুরিন আফরোজের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন বলে প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই আতিকুর রহমান খান জানান। গত সোমবার রাতে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক শিক্ষার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, আন্দোলনে সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আব্দুল জব্বার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর বিএনএস সেন্টারের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।

গত ২৭ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার আসামির তালিকায় ৩০ নম্বরে রয়েছে তুরিন আফরোজের নাম।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন আইনজীবী তুরিন আফরোজ। জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মামলা পরিচালনায় তিনি ভূমিকা রাখেন।

তাকে ২০১৭ সালের নভেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে ওই মামলা চলার মধ্যেই ২০১৮ সালের মে মাসে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তুরিনকে।

যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি ওয়াহিদুলের সঙ্গে গোপন বৈঠকের ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তাকে অপসারণ করে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তুরিন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। সেদিন বিকালে নীলফামারীর জলঢাকায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ব্যক্তিগত কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয়েছিল।

ক্ষমতার পালাবদলের সপ্তাহ দুয়েক পর ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুরিন আফরোজসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তদন্তের আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

ভোল পাল্টে হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বললেন তুরিণ আফরোজ : রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের জোর দাবি জানান। এ সময় তুরিন আফরোজের মনোনীত কোনো আইনজীবী ছিল না। তাই বিচারক আসামিকেই তার পক্ষে কথা বলতে বলেন। এসময় তুরিন আফরোজ বলেন, মাননীয় স্যার আমি দুই-তিন মিনিট যতটুকু পারব কথা বলতে চাই। হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি ৪ আগস্টে। এসময় আমার অপারেশন হয়। টিউমার অপারেশন। আমি সব ডাক্তারি রিপোর্ট দিতে পারব। আমি ৪ বছর ধরে মিডিয়ায় কিছু বলিনি বা লিখিনি। আমি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় ৬ বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। তবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করব। আশা করছি আমি ন্যায়বিচার পাব।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আ. জব্বার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর বিএনএস সেন্টারের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। গত ২৭ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারনামীয় ৩০নং আসামি তুরিন আফরোজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত