ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গহিন অরণ্যে আরাকান আর্মির পোশাক

গহিন অরণ্যে আরাকান আর্মির পোশাক

কক্সবাজারের রামু সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আপারেজু বনবিট। এই বনবিট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে শিলকুম পাহাড়। গত রোববার আলোচিত ওই গহীন অরণ্য থেকে মিলেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পোশাক। এ ঘটনার পর তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রামুর চোরাচালান চক্র এই রুটকে ব্যবহার করে আসছিল। এমনকি মিয়ানমারের আরাকান আর্মির লোকজনও নানা সময় পাহাড়ি পথে এসে অস্ত্র, মাদক সরবরাহ করেন চোরাকারবারিদের হাতে। তারা বাংলাদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যান।

আবার অনেকে বলছেন, চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট শিলকুম পাহাড়। চোরাচালান-ছিনতাইয়ের ঘটনাও সংঘটিত হয় এই পাহাড়ে। তাদের ধারণা, চোরাচালান ও ছিনতাইয়ের সুবিধার জন্য আরাকান আর্মির পোশাকসহ বিভিন্ন বাহিনীর পোশাক ব্যবহার করত অপরাধীরা।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় কাঠুরিয়াসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক কাঠুরিয়া দাবি করেন, রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মাঝামাঝি এলাকায় শিলকুম পাহাড়ে তারা আরাকান আর্মির পোশাক পরে লোকজনকে আনাগোনা করতে দেখেছেন। প্রায় সময় তাদের হাতে ভারি অস্ত্র দেখা যেত। তাদের মতে, হয়তো অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতে এসে ভোরের আলো ফোটার কারণে তারা পোশাকগুলো রেখে গেছেন। তাদের মতে, আরাকান আর্মির লোকজন বাংলাদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্যও নিয়ে যান।

অন্যদিকে অপর এক সূত্র বলছে, সীমান্ত বাহিনীর লোকজনের চোখ ফাঁকি দিতে স্থানীয় চোরাচালান চক্র আরাকান আর্মির পোশাক পরে মাদক পাচার এবং পাহাড়ি জনপদে বিভিন্ন নাশকতা কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন। সামাজিক বনায়নের স্থানীয় কয়েকজন পাহারাদার জানান, গেল পবিত্র রমজান মাসে শিলকুম পাহাড়ে চারবারের বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাত বাড়লে ওই স্থানে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তাদের ধারণা, মাদকসহ চোরাই পণ্য ছিনিয়ে নিতে হয়তো অপরাধী চক্র গুলি চালায়। সর্বশেষ গত শবেবরাতে গভীর রাতেও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

আরাকান আর্মির পোশাক উদ্ধারে অংশ নেয়া আপারেজু বনবিট কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন বলেন, গত রোববার শিলকুমের গহীন পাহাড়ে কাজে গিয়ে আরাকান আর্মির পোশাকাদি পাওয়া যায়। ওই স্থানে খণ্ড খণ্ড বর্ডার গার্ড বা বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ওই দিনের অভিযানে আরাকান আর্মির ইউনিফর্ম ও জুতাসহ একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ও রাজারকুল রেঞ্জের দায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. অভিউজ্জামান আরাকান আর্মির পোশাক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিলকুম পাহাড়ি এলাকাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা দিনের বেলায় যাওয়াও কঠিন। তবুও বন রক্ষার্থে বন কর্মীসহ স্থানীয় উপকারভোগীরা কাজ করে যাচ্ছেন। খণ্ড খণ্ড বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পোশাক দেখতে পাওয়ার বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছেন বলে জানান।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, বন বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলটি কিছু অংশ রামুর হলেও বেশিরভাগই নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়। তবুও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি। শিগগিরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি চক্র শিলকুম পাহাড়ি এলাকাকে চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে সংবাদ পেয়েছি। স্থানীয় চোরাচালান চক্রের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত