ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে র্যালি করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালিটি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে থেকেই ঢাকার দুই মহানগরের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন, এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। র্যালি শুরুর আগে পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। র্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক ও মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরা র্যালিতে হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, মাথায় ফিতা বাঁধা ও নানা রকম প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘গাজা হত্যাযজ্ঞ বন্ধ কর’, ‘ফিলিস্তিনের পক্ষে, বর্বরতার বিরুদ্ধে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলেছেন, ফিলিস্তিনে শিশু ও সাধারণ মানুষের ওপর অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। ইসরায়েলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে জাগ্রত করতেই বিএনপির এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।
এদিকে, বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন সতর্ক অবস্থায়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও গতকাল দেশব্যাপী সব মহানগরেও প্রতিবাদী র্যালি করেছে বিএনপি। এদিকে র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে খোলা ট্রাকের ওপর। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনে যে নারকীয় অত্যাচার-হত্যা হচ্ছে, তা দেখে আমাদের মনে হতে পারে যে, শুধু তাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আসলে বিষয়টি তা নয়, এক সময় তারা ধীরে ধীরে বিশ্বের সব মুসলমানকে নিঃশেষ করার চেষ্টা করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে র্যালি-পূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, মুসলিম বিশ্বের যেসব মোড়ল দেশ নিজেদের রাজত্ব বাঁচানোর জন্য নিজেরা নেতৃত্ব দিচ্ছে না তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ নেমে পড়বে। তারা নেতৃত্ব দিলে এবং মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করলে ফিলিস্তিনের এই অবস্থা হতো না।
মির্জা আব্বাস বলেন, একজন ছাত্র ভাই বলেছে, যদি বর্ডার থাকত তাহলে আমরা ফিলিস্তিনে যুদ্ধ করার জন্য নেমে পড়তাম। আমি তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, যদি আজকে সুযোগ হতো, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আল্লাহর রহমতে বিশ্বের যে কোনো দেশে গিয়ে যুদ্ধ করতাম।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক রকম বড় হয়েছে। এই মিছিলে শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা অংশ নিয়েছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও অনেক দূর থেকে আজকের এই র্যালিতে অংশ নিতে এসেছি। এই মিছিলে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্য একটা। কারণ, সশরীরে ফিলিস্তানি মুসলমানদের জন্য কিছু করতে পারছি না।
বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকাতে সবাই ব্যস্ত হলেও ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যস্ত নয় বলে মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিএনপি আয়োজিত র্যালিতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
মুসলিম বিশ্বের দ্বিধাবিভক্তির কারণে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন চলছে অভিযোগ করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও রয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার পক্ষে। ফিলিস্তিন সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের এখনও আলাপ পাইনি। অনেক সুশীল রয়েছে, তাদের সাড়া মিলছে না।’