ফিলিস্তিনির গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়। এতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়। একপর্যায়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা না পেয়ে মানুষ রমনা পার্কে অবস্থান নেন। সকাল থেকে লাখো মানুষের ঢল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছালে বিকাল সোয়া ৩টায় বিখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক। গাজাবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে সবার পক্ষ থেকে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠের পর বিকাল সোয়া ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের মোনাজাতের মাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালীমন্দির গেট, টিএসসি সংলগ্ন গেট, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ফিলিস্তিনির পতাকা, লিফলেটসহ সমাবেশস্থলে অংশগ্রহণ করেন। এসময় আগতদের হাতে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে নানা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট’ বাংলাদেশের আয়োজনে কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা মিছিলের শহরে রূপ নিয়েছিল। ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে হাজার হাজার মানুষ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগানে উত্তাল ছিল ঢাকার রাজপথ। সকালেই পূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা জন¯্রােতে রূপ নেয়। লাখ লাখ নারী-পুরুষের সংহতি প্রকাশ করে সবার কণ্ঠে একই সুর ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। জায়নবাদী ইসরায়েল, নিপাত যাক, নিপাত যাক। ‘ফ্রম দ্য রিভার টু সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ বা পায়ে হেঁটে কর্মসূচিতে আসেন। গতকাল আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ থাকায় বিনামূল্যে পানি ও শরবত বিতরণ করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পানি-শরবত বিতরণ করতে দেখা যায়। কর্মসূচি সুশৃঙ্খল রাখতে প্রতিটি প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা প্রত্যেকটা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।
সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস। আজকের এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন আজহারী। তিনি বলেন, আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এই গণজমায়েতে, এই জনতার গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এ গণসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের একজনের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন। তিনি আরও বলেন, ‘মার্চ করতে গিয়ে লাথি-গুঁতা সব খেয়েছি, তারপরও আজ বুঝেছি বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিন ও আল আকসার পক্ষে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট পেজ তৈরি করেছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামি বক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ঢাকার বাইরে লোকজন, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসে। তাদের হাতে নানা প্ল্যাকার্ড ছিল। দুপুরে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। পিকআপ ভ্যানে করে তরুণদের স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। দুপুরের পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, কারী আহমাদ ইবনে ইউসুফ আজহারী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড, শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। যে কোনো অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সক্রিয় থাকা ও প্রতিরোধ গঠনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে নেত্রকোনা থেকে ভোর ৪টার দিকে রওনা দেন ডিসি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি বোরহান উদ্দিন। সকাল সাড়ে ১০টায় টিএসসিতে পৌঁছেন। বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা সাধারণ মুসলিম এবং মানুষ হিসেবে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, আমাদের রাষ্ট্রেরও তেমনি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। রাজধানীর আইডিয়াল কলেজ ধানমন্ডির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ কায়সার নিশা বলেন, গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি সংহতি জানাতে এসেছি। একজন মুসলিম হিসেবে এতে অংশগ্রহণ করার তাগিদে এসেছি। ভাটারা, বসুন্ধরা, আফতাবনগর, রামপুরা এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
‘মার্চ ফর গাজা’ ঘোষণাপত্র : ফিলিস্তানের মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং গাজায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে- আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি, সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ। এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত চারটি স্তরে দাবি উপস্থাপন করা হয়। আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। যেহেতু জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে এবং আমরা দেখেছি, গজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয় বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল এবং এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পশ্চিমা শক্তি বলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে এবং এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি- ১. জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে। ২. যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। ৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবির মধ্যে রয়েছে- ২. জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। ৩. গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে। ৪. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে। ৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। তৃতীয় দাবিগুলোর মধ্যে আছে- ১. বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘ঊীপবঢ়ঃ ওংৎধবষ’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। ২. সরকারের ইসরায়েলি যত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। ৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে। ৫. জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয় বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর। ৬. পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বশেষ চতুর্থ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করব সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে। ২. আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ। ৩. আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে এবং ৪. আমরা বিভাজিত হবো না। কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।
যেভাবে জড়ো হলো এতো মানুষ : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে মানুষ এসে জড়ো হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ইজরায়েলি পণ্য, বয়কট বয়কট’সহ নানা স্লোগান দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। তাই মাঠের বাইরে যে যার মতো জায়গায় অবস্থান নেন। পূর্বে শিক্ষাভবন, কদম ফোয়ারা, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবন থেকে শাহাবাগ মোড়, দক্ষিণে দোয়েল চত্বর ও পশ্চিমে টিএসসি মোড় সব জায়গাই ছিল লোকে লোকারণ্য। মূল মঞ্চে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আসনগ্রহণ করলেও সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো দলীয় বিভাজন দেখা যায়নি। অনেকেই জানিয়েছেন রাজনৈতিকভাবে তারা আলাদা আলাদা আদর্শ ধারণ করলেও ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে মানবতার লঙ্ঘন প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ। মিছিলে মিছিলে ঐক্যের সুর। কর্মসূচি ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে আগতদের মাঝে পানি ও শরবত বিতরণ করেন।
শিশুদের প্রতীকী রক্তাক্ত কফিন : মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে ছোট ছোট দলের মিছিলে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ফিলিস্তিনে নির্যাতিত শিশুদের লাশের প্রতীকী রক্তাক্ত কফিন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কাকরাইল মসজিদ মোড় থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন একদল যুবক। তাদের হাতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা। মিছিলের সামনে কফিনে মোড়ানো ফিলিস্তিনের শিশুদের প্রতীকী লাশ। তারা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, ইহুদি নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক স্লোগান দেন। এই মিছিলে অংশ নেয়া প্রায় সবাই গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারী। তাদের মধ্যে একজন আবু তাহের বলেন, এই কর্মসূচি সফল করতে গত তিন দিন ধরে তারা মার্কেটে গণসংযোগ করেন। সবাইকে নিয়ে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অংশ নেন। তাদের মিছিলে ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতীকী লাশ দেখে সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবীদের দায়িত্ব ছিল প্রশংসনীয় : ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। তবে এই আয়োজনে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি সহযোগিতায় কাজ করে কয়েকশ’ স্বেচ্ছাসেবী। সবার সহযোগিতায় রাখা হয় মেডিকেল ক্যাম্প, বিতরণ করা হয় পানি, শরবত। বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি, এনডিএফের চিকিৎসকরা মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে। কেউ দেয় ফিলিস্তিনের পতাকা।
শিশুদের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ : ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে গাজায় আহত হওয়া শিশুদের মতো করে কয়েকজন শিশু মাথায় ব্যান্ডেজ করে, সেখানে লাল রং লাগিয়ে এবং ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে হাঁটছেন। মূলত গাঁজার আহত শিশুদের প্রতি সংহতি জানাতেই এমন আয়োজন। ‘আমি একজন মুসলিম হয়ে চুপ থাকতে পারিনি। কেন ছোট বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার করছে ইসরাইলিরা। মুসলিমদের ওপর কেন এতো অত্যাচার করা হয়? আমি এটা মানতে পারি না। আমার থেকেও ছোট বাচ্চাদের ওরা (ইসরাইলিরা) হত্যা করছে। আমি ওদের বিচার চাই। আমি ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় এসেছি’। কথাগুলো ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলছিল মার্চ ফর গাজায় অংশ নেয়া এক ছোট্ট শিশু। তার বক্তব্য এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি নেটিজেনরাও। অন্য প্রদর্শনীতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মুখোশ পরা একজন ব্যক্তি প্রতীকী রক্তে ভরা বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন, যার শরীরজুড়ে রক্তের ছোপ (প্রতীকীভাবে ফিলিস্তিনিদের রক্ত)। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশধারী একজন আছেন, যিনি নেতানিয়াহুকে সহায়তা করছেন এবং তার দেহেও রয়েছে প্রতীকী রক্তের দাগ।