কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে।
প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়েছে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আগামীকাল রোববার লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের রাষ্ট্রীয় সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড পিএলসি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এটি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। ৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন আর কোনো বিদ্যুৎ আসছে না। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় একটি ইউনিট চালু করার কথা রয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও পিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি। গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করে পিডিবি। গত মার্চের শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা। পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, গতকাল ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম আছে। আজ বেলা একটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এসময় ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আগামীকাল লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ চেয়েছে পিডিবি। পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে আদানি। প্রথমে বন্ধ হওয়া ইউনিট দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে। ঘাটতি মেটাতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাড়তি উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। জ্বালানির সরবরাহ পাওয়া গেলে চাহিদামতো উৎপাদন করা যাবে। আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।
সর্বশেষ : উৎপাদনে এসেছে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ আদানির প্রথম ইউনিট আন্তঃদেশীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এই ইউনিটটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালু হতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। আদানির একটি সূত্র বলছে, অন্য ইউনিটটির কারিগরি ত্রুটি মেরামতের কাজ করছে তারা। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
পিডিবির (উৎপাদন) জহুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সোয়া ৬টায় গ্রিডে যুক্ত হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গ্রিডে এসেছে ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ধীরে ধীরে এই সরবরাহ বাড়তে থাকবে।’ প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল কারিগরি ত্রুটির কারণে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট এবং গতকাল শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। এতে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল দুপুর ১টায় আদানি থেকে ১৩০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে এসেছে। সন্ধ্যায় সেটি বেড়ে ঘণ্টাপ্রতি ১৩৬০ থেকে ১৩৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসেছিল। ৮ এপ্রিলের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে।