আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ নির্মাণকারী চিত্রশিল্পীর বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হাসান খানকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে এই কমিটি। গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ভাস্কর্য শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের গ্রামের বাড়ির একটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের ঘোষের বাজারে।
জানা গেছে, পহেলা বৈশাখে ঢাকায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানানোর কারণে চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্রের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মানবেন্দ্র ঘোষের পরিবারের দাবি, মানবেন্দ্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাকৃতি বানাননি, তিনি শুধু বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন। চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ি একই এলাকায়। এজন্য শেখ হাসিনার মুখাকৃতি তৈরির ক্ষোভ থেকে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন এ ঘটনা ঘটতে পারে। আগুনে ঘরের ভেতরে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ সেখানে জন সাধারণের উপস্থিতি সীমিত করে রেখেছে। তবে এ ঘটনার পরে ওই এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে মানবেন্দ্র বলেন, পহেলা বৈশাখে আমি শুধু বাঘের মোটিফটি তৈরি করেছি। আজকে দুর্বৃত্তরা আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এখন আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তায় ভুগছি। আগুনে একটি ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মুখাকৃতি নির্মাণের বিষয়ে তাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর আমিসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য গত মঙ্গলবার সদর থানার জিডি করেছি। এর পরই রাতে তার বাড়ির একটি ঘরে আগুন দেয়া হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়র হোসেন মোল্লা, মানিকগঞ্জ সদর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ঘটনা অনুসন্ধানে পুলিশ এবং সিআইডির চৌকস টিম কাজ করছে। আমরা আশাবাদী দ্রুত ঘটনা অনুসন্ধান করে অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ সম্পর্কে জানতে পারব। কারণ জানার পর আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
এদিকে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।
স্ট্যাটাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা লিখেছেন, শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি পুলিশের আইজিকে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরও লিখেন, গত কয়েকদিন জুলাইয়ে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ অনলাইনে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে আক্রমণের উসকানি দিচ্ছিল তাদের ভাষ্যে ‘হাসিনার এফিজি বানানোর অপরাধে’! এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, পাহাড় থেকে সমতলজুড়ে বাংলাদেশ মাত্রই এক অভূতপূর্ব মৈত্রীর উৎসব শেষ করল। এক অন্যরকম আবেশ সবার মনে। আর এই সময়ই ওরা আক্রমণ করে এটা মনে করিয়ে দিল জুলাই চলমান। কিন্তু ওরা জানে না বাংলাদেশের মানুষ জুলাই বুকে নিয়েই সামনে আগাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের ঐক্যের সামনে এরা তুচ্ছ।