ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চার ইসরায়েলি ট্যাঙ্কে আঘাত হানল হামাস

চার ইসরায়েলি ট্যাঙ্কে আঘাত হানল হামাস

প্রচণ্ড লড়াই চলছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীকে বিভিন্ন ফ্রন্টে প্রতিহত করে চলেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। আল-মায়াদিনের এক প্রতিনিধি গাজা থেকে জানিয়েছেন, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে আল-তুফফাহ এলাকায় গত বুধবার দখলদার এবং প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোর মধ্যে এই সংঘর্ষকে সবচেয়ে তীব্র বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, আল-তুফফাহ এলাকার আল-ওয়াফা হাসপাতালের পাশে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের চারটি মারকাভা ট্যাঙ্ককে আঘাত হেনেছেন তাদের যোদ্ধারা। ইয়াসিন-হানড্রেড-ফাইভ অ্যান্টি-আর্মার আরপিজি দিয়ে ট্যাঙ্কগুলোকে আঘাত করা হয়। গাজা উপত্যকায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা নতুন উদ্যমে তীব্র হামলা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডসের বরাতে মিডিয়াগুলো বলেছে, আল-তুফফার কাছাকাছি এলাকা আল-শুজাইয়ার পাহাড়ে অবস্থান নেয়া এক ইসরায়েলি সেনাকে নির্মূল করেছেন তাদের স্নাইপাররা। এদিকে, ইসরায়েলি বসতি নির-ইৎজাকে একঝাঁক রকেট নিক্ষেপ করেছে আল-কাসসাম ব্রিগেডস। ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যার জবাবে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ অবরোধ এবং ইসরায়েলের সর্বশক্তি নিয়োগ করে নতুন করে স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এসব হামলা প্রমাণ করছে, গাজার প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সামর্থ্য এখনও অটুট আছে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বক্তৃতাণ্ডবিবৃতিতেও একই ধরনের আভাস মিলছে। তারা বলছেন, গাজায় দখলদার বাহিনীর ঠাঁই হবে না। তাদের পরাজিত করে ফিলিস্তিনিরাই গাজার ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।

ইসরায়েলে যুদ্ধ বন্ধের জোরালো দাবি : গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবিমানগুলোর পাইলট, যুদ্ধরত সেনা, যুদ্ধে কর্মরত চিকিৎসক, এমনকি শিক্ষকদের বড় একটি অংশ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত স্বার্থে এই যুদ্ধ চলছে জানিয়ে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক কর্মকর্তা অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। গত বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আবেদনে স্বাক্ষর করা রিজার্ভ ডাক্তারদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। আবেদনে স্বাক্ষর করা বেশ কয়েকজন রিজার্ভ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাদের কমান্ডিং অফিসাররা। স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে বলা হলেও নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি জানান তারা। এরপর সিনিয়র কমান্ডাররা তাদের বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করা এক কর্মকর্তা ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভকে জানিয়েছেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে এক ফোনকল পেয়েছেন, যেখানে তাকে স্বাক্ষর প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। কিন্তু, তিনি তা মানতে রাজি হননি। খবরে বলা হয়, একই ধরনের আবেদনে স্বাক্ষর করা ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর প্রায় এক হাজার রিজার্ভ সদস্যদের বিরুদ্ধেও প্রায় একই ধরনের শাক্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপের পরও ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী জনমত প্রবল হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যদের এই পদক্ষেপে বড় ধরনের বেকায়দায় পড়েছে সরকার।

হামাসকে রাশিয়ার অভিনন্দন: গাজা উপত্যকায় ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বন্দি থাকা রুশ-ইসরায়েলি আলেক্সান্ডার ট্রুফানোভকে মুক্তি দেয়ায় হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সম্প্রতি ট্রুফানোভকে মুক্তি দেয়া হয়। গত বুধবার পুতিন এই পদক্ষেপকে মানবিক বলে বর্ণনা করেন। ট্রুফানোভের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সময় পুতিন বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল সম্পর্কের কারণে তার মুক্তি সম্ভব হয়েছে। পুতিন বলেন, ‘এই মানবিক কাজ করার জন্য হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।’ তিনি বলেন, মস্কো ট্রুফানোভের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও একই রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গাজায় থাকা সব বন্দি মুক্তি পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। খবরে বলা হয়, হামাস ও রুশ প্রেসিডেন্টের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর পর থেকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করেছে রাশিয়া।

ইসরায়েলকে সতর্ক করল জার্মানি : অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড স্থায়ীভাবে দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছে জার্মানি। মূলত ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজার তথাকথিত নিরাপত্তা অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার কথা বলার পর জার্মানি এই সতর্ক করল। গাজা ফিলিস্তিনিদের এলাকা বলেও গত বুধবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে দেশটি। আনাদোলু জানিয়েছে, গাজা নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর জার্মানি সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা গাজার স্থায়ী দখল মেনে নেবেন না। বুধবার বার্লিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিনিদের এলাকা এবং জার্মান সরকার গাজার স্থায়ী দখল ও ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে সেখান থেকে বিতাড়নের কৌশলকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জার্মান পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে পৌঁছানো, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা পৃথক দুটি রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে বসবাস করতে পারেন।’ খবরে বলা হয়, গাজাবাসীদের বিতাড়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরে বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়ায় এবং দক্ষিণের রাফাহ শহর ও খান ইউনুসের কিছু অংশ থেকে মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গত ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল। এর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ গাজাবাসী নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ মাস যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এটি ছিল তিন পর্বের। প্রথম পর্বে ছিল যুদ্ধ বন্ধ ও বন্দিবিনিময় শুরু করা, দ্বিতীয় পর্বে ছিল বন্দি বিনিময়ের কাজ শেষ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, তৃতীয় পর্বে ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠন।

তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ না করে গত ১৮ মার্চ থেকে আবার গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলের ফের শুরু করা এই হামলায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া অভিযান শুরুর পর থেকে গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না দখলদার বাহিনী।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিহত ৩৫ : এদিকে গত বুধবার সকাল থেকে গাজায় ভয়াবহ হামলার খবর দিয়েছে আলজাজিরা। এদিন সকাল থেকে চলা ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

এই হামলাকে আগের চেয়েও ধ্বংসাত্মক বলে উল্লেখ করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ হাজার ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার মিডিয়া অফিসের আপডেট তথ্য বলছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০’রও বেশি হবে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়া হাজার হাজার মানুষ আর বেঁচে নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত