ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কাফনের কাপড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মিছিল

কাফনের কাপড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মিছিল

ছয় দফা দাবি আদায়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করেছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পেছনের মসজিদ থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলটি বের হয়ে সাত রাস্তা মোড় ও বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। মিছিলের পর এক ব্রিফিংয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘সরকার কর্তৃপক্ষকে বলব, আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিন, আমরা রাজপথ ছেড়ে দেব। কুমিল্লার ভাইদের উপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করুন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।’ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের আরেক প্রতিনিধি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার, শিক্ষার্থীদের সরকার, বিপ্লবীদের সরকার। এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। কারিগরি শিক্ষা সেক্টরে যে বৈষম্য আছে, আমরা চাই সরকার তা দূর করুক। তিনি বলেন, ‘আমাদের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর সাবেক শিক্ষার্থী যে সিনিয়র ভাইয়েরা গাজীপুরের ডুয়েটে অধ্যয়নরত, তারা আল্টিমেটাম ঘোষণা করবেন। আমরা সরকারকে বারবার সময় দিচ্ছি, আমাদের দাবি বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করুন।’ রাজপথ ও রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কর্মসূচির সময় পরে জানিয়ে দেয়া হবে। এর আগে গত বুধবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে একযোগে তারা নামায় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোগান্তিতে ছিল পুরো নগরী। পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে মশাল মিছিল করেন। ওইদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কারওয়ান বাজার রেলগেটে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক চলা পর্যন্ত সে কর্মসূচি শিথিল রেখেছিলেন তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত বুধবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো: জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ওই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬০০০ টাকা দেয়া। কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব নিয়োগ দেয়া। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সব নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সব শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত