সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে ইসিকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি। গতকাল দুপুর সোয়া ২টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী। নির্বাচন কমিশন গঠন আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধি ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে সোয়া ২টা পর্যন্ত। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সিইসি এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তবে নির্বাচন কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট কেউ এ ব্যাপারে কথা বলে থাকতে পারে। বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তারপরও আমরা বলব, সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলার আগে যেন তারা এ বিষয়ে কিছু না বলেন। কারণ এতে বিভ্রান্তি হতে পারে। এনসিপির নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন সংক্রান্ত আমাদের অনেক কাজ বাকি রয়েছে। অনেক জায়গায় আমাদের অফিস গোছানোর কাজ চলছে। আমরা চাই, আমাদের দলে যেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের কেউ স্থান না পান। তাই আমরা সব যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য গত ১৭ এপ্রিল নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার কথা বলেছেন সিইসি। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে নামে-বেনামে বা একই নামে বিভিন্ন দলের নিবন্ধন দিয়ে গেছে বিগত সরকার। আমরা ২০২২ সালের সার্চ কমিটির বিরোধিতা করছি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি সংস্কার করা না হয়, তারপর আমরা এ বিষয়ে কথা বলব। পাটোয়ারী বলেন, আমরা বলেছি গত ১৫ বছর যারা নির্বাচনে জালিয়াতি করেছে, তাদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়। আমরা চাই, এবার যেন শিক্ষক ও ইমাম থেকে শুরু করে সমাজের পরিশীলিত ধারার ব্যক্তিরা নির্বাচন করার সুযোগ পান। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সার্টিফিকেশন দিতে বলেছি। মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয় তাও বলেছি। তারা এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তিনি বলেন, গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরও ভোটে জালিয়াতির প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট বিজয়ী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। পাটওয়ারী বলেন, আমরা নির্বাচনি ব্যয় বিধিমালা ও আচরণবিধি পরিবর্তনের কথাও বলেছি। ভোটে পেশিশক্তি রোধের বিষয়টি দেখার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মানুষের ভোট কিনে যেন ভোটাধিকারে বাধা না দেয়া হয় এবং ঋণ খেলাপিরা যেন ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তাও বলেছি। তিনি বলেন, সিইসি এসব বিষয় বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন- যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনুভা জাবীন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বিগত নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির দপ্তরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন, দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনুভা জাবীন।
বৈঠকের বিষয়ে নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এর দায় নির্বাচন কমিশনেরও। বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়েছে ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের যারা অনিয়মে যুক্ত, তাদের নিয়ে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান করা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন ইসি থেকে দেয়া, প্রার্থীদের হলফনামা তদন্ত করে তার সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনি সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেয়া বন্ধ করা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে তা মনিটরিং করার কথা তুলে ধরেছি। এছাড়া একই নামে দলকে নিবন্ধন দিয়েছে, অফিস নেই তাদের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। তাই প্রত্যেকটা দলকে নতুন করে নবায়ন করা এবং সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে তাগিদ দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।