ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

একই ব্যক্তিকে সরকার, সংসদ ও দলীয় প্রধান চায় বিএনপি

একই ব্যক্তিকে সরকার, সংসদ ও দলীয় প্রধান চায় বিএনপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনটি দ্বিমত পোষণ করেছে। একই ব্যক্তিকে সরকার, সংসদ ও দলীয় প্রধান চায় বিএনপি। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনে বিএনপি দ্বিমত পোষণ করেছে। প্রার্থীর বয়স ২১ বছরে নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশকিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না। যেখানে এমন কিছু করা হয়, যাতে সবাই একমত হতে হয়।

বাংলাদেশে একই ব্যক্তি সরকার প্রধান, দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না এমন প্রস্তাবে কোনো বাধ্যবাধকতা চায় না বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে একথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি। কারণ বিষয়টি নির্ভর করছে নির্বাচিত দলের সংসদীয় প্রতিনিধিদের ওপর। গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে বের হয়ে এসে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। এরপর কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আবার শুরু হয়, যা এখনও চলছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টির প্রধানই সরকারপ্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি বলেন, টানা দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। তবে বিরতি দিয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে সমস্যা নেই বলে মত দিয়েছে দলটি। ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে বিএনপি। এর জন্য সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের পর আরেকটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হবে পরবর্তী সময়ে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘ইলেক্টোরাল কলেজে’র মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একমত নয় বিএনপি। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেশকিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও অনেক বিষয়ে আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি। তিনি বলেন, বিএনপি বাকশালে বিশ্বাস করে না। একদল যা বলবে তাই মানতে হবে, এমনটা নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সর্বোত্তম কিছু হবে বলে আমরা আশা করি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৫ম সংশোধনী চায় বিএনপি। মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিয়ে আমরা একমত। সংবিধানে বহুত্ববাদ নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আমরা একমত।’ তবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনে বিএনপির দ্বিমত রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চায় ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। নারীর আসন ১০০টি করার বিষয়েও দল একমত, তবে এটি ত্রয়োদশ সংসদ থেকে কার্যকর হোক এই মত বিএনপির। এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে তারা।’ প্রার্থীর বয়স ২১ বছরে নির্ধারণে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলেও জানান সালাহউদ্দিন।

লিডার অব দ্য হাউজ কে হবেন সেটিও রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বলে বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা সালাহউদ্দিন মনে করেন। এ বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে দলটির মতপার্থক্য রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘উচ্চ ও নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বিএনপি একমত হলেও তারা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।’ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চেক অ্যান্ড ব্যালান্সে আনতে আমরা পরামর্শ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, এনসিসি নিয়ে আমরা একমত নই। এতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে। কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার হয় না। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কেয়ারটেকার রাখা প্রয়োজন, এটি ডকট্রিন অব নেসেসিটির অংশ।

গতকাল রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের পর এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২২ এপ্রিল আবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে। সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে একমত বিএনপি। তবে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকারের বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানের অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্র বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত