মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ মে দিন ঠিক করেছেন আদালত।
ওইদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ শুনানি করবেন। দালত বলেছেন, সেদিন আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে। নির্ধারিত দিনে গতকাল মঙ্গলবার পৌনে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। এসময় জামায়াতের সেক্রেটারির জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, অ্যাডভোকেট মো. মাতিউর রহমান আকন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জামায়াতপন্থি অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারা আদালতের বাইরে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আজহারুলের করা আপিল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণে গতকাল সোমবার আরজি জানান তার আইনজীবী। আজ আপিলটি আদালতের কার্যতালিকায় ২৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদেশের পর আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ সব বিচারপতি না বসায় শুনানি পিছিয়েছে। কেননা আগে আপিল বিভাগের বেঞ্চে পাঁচজন বিচারপতি ছিলেন। সম্প্রতি দুইজন নিয়োগের ফলে সাতজন হয়েছেন। তাই আগামী ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি হবে। মামলার গুরুত্বের কারণেই শুনানি পেছানো হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে বিচার হলে আজহারুল ইসলাম ফাঁসির দণ্ড থেকে রেহাই পেতেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এছাড়া যারা দেশে-বিদেশে এ নিয়ে আবেগ প্রকাশ করছেন, তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আগামী শুনানিতে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব বলে আমরা আশাবাদী। এর আগে, এটিএম আজাহারুল ইসলামের আইনজীবী আবেদনের শুনানির জন্য গতকাল মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। গত সোমবার সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনটি উপস্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক।
এর আগে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান আজহারুল ইসলাম। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার ওই আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়। সে অনুসারে আপিল প্রস্তুত করা হয়।