জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদ। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন চান তারা। তাছাড়াও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও মত দিয়েছেন উভয় দলের নেতারা।
গতকাল বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন দুই দলের শীর্ষ নেতারা। বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে সংলাপ চলে ৪টা পর্যন্ত।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন ও এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি। জুলাই গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধেও একসঙ্গে কাজ করবে দুই দল। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যারাই রাষ্ট্র শাসন করেছেন, কেউই দেশপ্রেমিক শক্তি ছিলেন না। আমরা চাই আগামীতে দেশপ্রেমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকব। নারী সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানান চরমোনাই পীর। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছেন বলেও জানান। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, যেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা সঠিক হবে না। তাই আমরা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমরা মনে করি সংস্কার কাজ চলবে এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে। তাই এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদ একমত হয়েছে। কারণ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি না থাকায় জনগণ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। নূর আরও বলেন, নির্বাচনের আগে গণহত্যাকারীদের বিচার ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার হবে। তাই আমরা এ পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কোনো কিছু আমরা মানব না। নারী সংস্কার কমিশনে ইসলামবিরোধী কিছু থাকলে তাও আমরা সমর্থন করব না। সংস্কার, নির্বাচন ও চলমান ইস্যুতে এই বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ও মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম। অপরদিকে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে দলটির সভাপতি নুরুল হক নূর ও সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখপাত্র হাসিবুর রহমান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ ও হাসান আল মামুন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চায় ইসলামি দলগুলো: প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চায় পাঁচটি ইসলামি দল। এছাড়া নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিও জানিয়েছে তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। নারী সংস্কার কমিশন বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আব্দুল রব ইউসুফী, খেলাফত মজলিশের সেক্রেটারি জেনারেল ড. আহমদ আব্দুল কাদের। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ আতহারি প্রমুখ।