ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বছরের শেষ ভাগে সাংগঠনিক ব্যস্ততা আওয়ামী লীগে

বছরের শেষ ভাগে সাংগঠনিক ব্যস্ততা আওয়ামী লীগে

২০২০ সালের শুরু থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের পরিকল্পনা করা হলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। মার্চের পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমও প্রায় স্থবির পড়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর বছরের শেষ ভাগে এসে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনার চেষ্টা করে দলটি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও পৌর নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা অনুষ্ঠান উদ্বোধনের মাধ্যমে মুজিববর্ষের কার্যক্রমের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ষব্যাপী কর্মসূচি পালনে ২৯৬টি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল উদযাপন কমিটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করতে হয় করোনা মহামারির জন্য। একইভাবে দলীয় কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে করোনার কারণে। দীর্ঘ বিরতির পর গত সেপ্টেম্বরের সম্মেলন হওয়া জেলা কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের খসড়া কমিটি জমা দিতে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত বছর ৩১ জেলা ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হলেও

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানের পর প্রায় সব জেলা ও সহযোগী সংগঠনগুলো কমিটি জমা দেয়। এর পরই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ প্রায় ৯ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনেরও কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এ সময়ের মধ্যেই। করোনাভাইরাসের কারণে সংগঠনিক কাজে স্থবিরতা থাকায় বছরজুড়ে মানবিক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় দলটিকে। এর সঙ্গে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে নানা কর্মসূচি নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন এই দল ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহামারির এ বছরে কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রিপরিষদ ও দলীয় সংসদ সদস্যসহ সারা দেশের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে হারিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

শেষ দিকে এসে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রাণচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বছরের শেষ ভাগে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ২৩ পৌরসভায় নির্বাচনের মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানোর মধ্য দিয়ে।

অন্যদিকে দলের নিয়মিত কর্মকা-ের অংশ হিসেবে বছরের শেষদিকে ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন দু’জন সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে দলের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং ২৫ নভেম্বর সিরাজুল মোস্তফাকে ধর্ম সম্পাদক করা হয়।

২০২০ সালে মাঠের রাজনীতি অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল করোনার কারণে। রাজপথে বিরোধী দলকে খুব একটা মোকাবিলা করতে হয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। তবে নারী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সারা দেশে হওয়া আন্দোলনে কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হয় তাদের। এছাড়া বছরের শেষ সময়ে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে মাঠের কর্মসূচিতে সক্রিয় হতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে।

বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসের মতো এক অজানা মহামারি আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসে উপস্থিত হয়। এক অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইটা ভালোই করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জীবন এবং জীবিকাকে পাশাপাশি রেখে মানুষ যেন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে না পড়ে সেটা দেখাই ছিল তার কৌশলের প্রধান দিক। কঠিন সময়ে তার যোগ্য নেতৃত্ব ও সমপোযোগী সিদ্ধান্ত বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে সফলভাবে এই সংকট মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রশংসা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও।

লকডাউনের সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সংকটে না পড়ে সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের একাধিকবার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশনায় কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। শুরু থেকেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ, অসহায় ও কর্মহীন মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে দলটি। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যেই আঘাত হানে বন্যা ও ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এই সময়েও সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

করোনা মহামারি আওয়ামী লীগের ওপর বড় ধরনের আঘাত হানে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মকবুল হোসেন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের এমপি ইসরাফিল আলমকে তারা করোনায় হারিয়েছে। এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫২২ নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত