ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নতুন বছরে সরকার বদলের প্রত্যাশা ফখরুলের

নতুন বছরে সরকার বদলের প্রত্যাশা ফখরুলের

ইংরেজি নতুন বছরে সরকার পরিবর্তনের প্রত্যাশায় ‘জন-ঐক্যের’ সংকল্প গ্রহণের কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল বুধবার এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, এ বছর শেষ হচ্ছে। আগামী বছরে আসুন আমাদের সবার একটাই সংকল্প হবে, শপথ হবে ঐক্য। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দানবীয়

সরকার, এ স্বৈরতান্ত্রিক সরকার, একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করব, জনগণের

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে এ সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে। মহানগরসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবের আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের পুলিশের বাধা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, খুব দুঃখ হয়, লজ্জা হয়, যখন দেখি আমাদের আজকের এ সমাবেশে আসতে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। যখন দেখি এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে অসংখ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আর লজ্জা হয় যখন দেখি এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তারা গণতন্ত্র দিয়েছেন বলেই নাকি দেশ খুব ভালো চলছে।

আজকের এ দিনটি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। এ দিনে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। সেই আকাক্সক্ষা, সেই চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একটা প্রশাসনের জোরে নির্বাচন করে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। এ দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও কলঙ্কের একটা দিন।

ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, তারা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং বাংলাদেশে একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনোদিনই গণতন্ত্র বিশ্বাস করেনি। তারা সবসময় গণতন্ত্রের বিরোধিতা করেছে, কাজ করেছে উল্টো। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য, দেশের মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা থাকবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজ অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অনেক সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে অনেক সাংবাদিককে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে।

এ সরকার গোটা দেশটাকে কারাগারে পরিণত করেছে। এ সরকার বাংলাদেশের মানুষকে শ্বাসরুদ্ধ করে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আজ এ অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে, সমগ্র মানুষকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে বাধ্য করতে হবে এ সরকারকে সরে যেতে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে।

নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এ কমিশন সারাদিন মিথ্যা কথা বলে, যে কথাগুলো শুনলে লোকে হাসে। এখন নাকি খুব সুন্দর নির্বাচন হচ্ছে, চমৎকার নির্বাচন হচ্ছে। যেখানে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না মানুষ, ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করে। একখানে দিলে আরেকখানে ভোট পড়ে। ধানের শীষে ভোট দিলে নৌকায় গিয়ে পড়েÑ এ অবস্থা তারা তৈরি করেছে। মহামারি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেন ফখরুল।

মহানগর দক্ষিণের সভাপতি যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নকির পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, আমিনুল হক, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভূঁঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন। রাজধানী ছাড়াও বুধবার সারা দেশে জেলা ও মহানগরেও বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত