দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে দায়িত্ব বিমান বাহিনীর সদস্যদের কাঁধে রয়েছে, তা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশেই যুদ্ধবিমান তৈরির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে উন্নত বিশ্বের বিমান বাহিনীর সমপর্যায়ে দেখতে চাই। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ-২০২১ এর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রত্যাশার কথা জানান। যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অত্যাধুনিক, শক্তিশালী, পেশাদার ও চৌকশ বিমান বাহিনী গঠনের। সে লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেছিলেন সে সময়ের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২১, হেলিকপ্টার, র?াডারসহ নানাবিধ যুদ্ধ সরঞ্জাম। জাতির পিতা যে একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই বাস্তব রূপ আজকের এই মিলিটারি একাডেমি, নেভাল একাডেমি এবং বিমান বাহিনী একাডেমি।
বিমান বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে থেমে যায় বিমান বাহিনীসহ বাংলাদেশের সব উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সে সময় আমরা বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করি। যদিও এই মিগ-২৯ ক্রয় করতে গিয়ে আমার নামে অলৌকিকভাবে মামলা দেয়। আমি এটা পরোয়া করি না, মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয়।
তিনি বলেন, মহাকাশ গবেষণা, বিমান বাহিনীর উন্নয়ন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল সেক্টরকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশেই একদিন বিমান, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি কমিশনপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর নতুন সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
প্রাদুর্ভাব বেশি হলে স্কুলগুলো চালু রাখা সম্ভব হবে না : ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং একই সঙ্গে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে এ ফল প্রকাশ এবং উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে শিক্ষার্থীদের যা কিছু প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনলাইনে শিক্ষাটা, এটা চালু রাখতেই হবে। কারণ করোনা কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। আমরা সব সময় যেটা লক্ষ্য করেছি, এই শীতের পরপর যেন এর প্রাদুর্ভাবটা আবার বেড়ে যায়।’ এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়, যেহেতু স্কুলগুলো চালু রাখা সম্ভব হবে না। যে কারণে অনলাইন শিক্ষা যাতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। কারণ এখন কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যা নেই। বিদ্যুৎ সব জায়গায় আছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনাটা অনলাইনে চালাতে পারে তার জন্য যেসব উপকরণ, যা যা প্রয়োজন সেটা আমরা ব্যবস্থা করব।’
এর আগে মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ ১১টি বোর্ডের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাতে ফল তুলে দেন। এবার করোনার কারণে ১ জানুয়ারি সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না হলেও সেদিন থেকেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ শুরু হবে এবং ভিড় এড়াতে একেক দিন একেক শ্রেণির বই প্রদান করা হবে। এবারে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে ঘরে বসেও মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। সংসদ টিভি এ কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় ব্যবহার করতে পারবে। তিনি এই করোনার মধ্যেও ফল ঘোষণার সাফল্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষমন্ত্রণালয়সহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা। এজন্য তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোগ্য নাগরিক আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল ঘোষণার পাশাপাশি নতুন বছরের নতুন বই দেওয়া হচ্ছে। বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা, নতুন বই মলাট লাগানো ও তাতে নাম লেখা, এটা অন্যরকম অনুভূতি। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাদের উপযোগী করেও বই প্রস্তুত করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা তাদের পাঁচটি ভাষা পেয়েছি। সে ভাষায় বই করে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১ লাখ শিক্ষক এবং কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ২ লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে অনেক শিক্ষার্থীর এ সমস্যা থাকায় লেখাপড়ায় সমস্যায় পড়তে হয়, যা অনেক সময় সবার অগোচরেই থেকে যায়।’
কেউ যেন টিকার বাইরে না থাকে : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১২ বছর বয়স পর্যন্ত যারা তাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারপ্রধান সতর্ক করে বলেন, ‘নতুনভাবে যাতে আবার সংক্রমিত না হয় তার ব্যবস্থা এখন থেকেই আমাদের নিতে হবে। কাজেই কেউ যেন টিকার বাইরে না থাকে। সবাইকেই কিন্তু এই ভ্যাকসিন নিতে হবে।’
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা দেখা গেছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘এরইমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। যে কমিউনিটি ক্লিনিক সেন্টারগুলো আছে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো আছে সারা বাংলাদেশে, তার মাধ্যমে টিকা প্রদান কর্মসূচিটা যেন চালু রাখে সেটা যেন অব্যাহত থাকে, যাতে একেবারে তৃণমূল পর্যায়েও মানুষ যেন দ্রুত টিকা নিতে পারে।’ এসএসসির ফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে পরীক্ষায় যারা পাস করেছে তাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি যারা উত্তীর্ণ হয়নি তাদের আবারও মন দিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।