ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শঙ্কিত ডব্লিউএইচও

অমিক্রন ও ডেল্টার দাপটে কোভিড ‘সুনামি’

অমিক্রন ও ডেল্টার দাপটে কোভিড ‘সুনামি’

করোনাভাইরাসের দুই ধরন অমিক্রন আর ডেল্টা বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের যে ‘সুনামি’ বইয়ে দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘এই বিপুল সংক্রমণ ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দশা তৈরি হচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপজুড়ে এক দিনে রেকর্ড নতুন রোগী শনাক্তের খবরের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসের এই শঙ্কিত ভাষ্য এলো। বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের রেকর্ড রোগী শনাক্ত হয়েছে বুধবার, এক দিনেই সংক্রমণ ধরা পড়েছে প্রায় দুই লাখ। আর জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৭ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। ডেনমার্ক, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়াতেও বুধবারের শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। পোল্যান্ডে এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৯৪ জন কোভিড রোগীর। সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ে সেখানে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গত বুধবার দেশটিতে যারা মারা গেছেন, তাদের তিন-চতুর্থাংশই কোভিড টিকার বাইরে ছিলেন।

মাত্র এক মাস সময়ের মধ্যে বিশ্বের বহু দেশে প্রাধান্য বিস্তার করা করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনটি আগের ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়ে কম গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি করে বলে প্রাথমিক গবেষণায় তথ্য এসেছে। কিন্তু দুই ডোজ টিকা এ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারছে না বলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে, যা দিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরান বলেছেন, অমিক্রন যা ঘটাচ্ছে, তাকে আর সংক্রমণের ঢেউ বলা চলে না, এটা রীতিমতো ‘জলোচ্ছ্বাসে’ পরিণত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক অবশ্য কেবল অমিক্রনের কথা বলছেন না। সঙ্গে ডেল্টাকে যুক্ত করে তিনি একে বলছেন ‘জোড়া হুমকি’।

রয়টার্সের হিসাব বলছে, এখন প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে ৯ লাখ নতুন কোভিড রোগী শনাক্তের খবর আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি সিএনএনকে বলেছেন, তার দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে টিকাদান যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে জানুয়ারির শেষ নাগাদ অমিক্রনের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

কিছু দেশ, বিশেষ করে যারা ধনী, তাদের নাগরিকদের কোভিড টিকার তৃতীয় ডোজ দিচ্ছে বুস্টার হিসেবে। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে তাদের ১২ বছরের বেশি বয়সি নাগরিকদের ৫৭ শতাংশকে তৃতীয় ডোজ দিয়ে ফেলেছে।

ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস অবশ্য মনে করেন, ধনী দেশগুলোর বড় পরিসরে এই বুস্টার ডোজ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত মহামারিকে দীর্ঘায়িতই করবে, কারণ তাদের তৃতীয় ডোজ যোগাতে গিয়ে গরিব দেশগুলো টিকাবঞ্চিত থেকে যাবে, যেখানে টিকাদানের হার এমনিতেই কম। ফলে সেসব দেশে আরও বেশি ছড়ানোর এবং নতুন নতুন মিউট্যান্ট তৈরি করার সুযোগ পাবে ভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ৯২টিই ২০২১ সালের মধ্যে তাদের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে কোভিড টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

সে কারণে আগামী জুলাই মাসের আগেই জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে অঙ্গীকার নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. তেদ্রোস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে ইউরোপে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৭ শতাংশ, আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ শতাংশ। পরের দিনগুলোতে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে বুধবার নতুন নতুন রেকর্ডের তথ্য এসেছে।

ফ্রান্সে একদিনে ২ লাখ ৮ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৮৪ জনের। যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, ৫৭ জনের প্রাণ গেছে। ইতালিতে দৈনিক শনাক্ত ৯৮ হাজার ছাড়িয়েছে, একদিনেই নতুন রোগী বেড়েছে ৭৮ হাজারের বেশি। ডেনমার্কে বুধবার যে ২৩ হাজার ২২৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের ১২০৫ জন আগেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পর্তুগালে একদিনে শনাক্ত হয়েছে ২৬ হাজার ৮৬৭ জন নতুন রোগী, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭ হাজার ১৭২ জন বেশি।

অস্ট্রেলিয়ায় মঙ্গলবার রেকর্ড ১১ হাজার ৩০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল, গত বুধবার তা ছাড়িয়ে ১৮ হাজার ২৪১ জনের শরীরের ধরা পড়েছে সংক্রমণ। গ্রিসেও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হয়েছে, একদিনে শনাক্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৮২৮ জন নতুন রোগী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বড়দিনের ছুটির মধ্যে কোভিড পরীক্ষা বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টিও দেশে দেশে রেকর্ড রোগীর তথ্য আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত