এবারই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছেন কৃষক। তাই হাওরজুড়েই উৎসবের আমেজ। দিন-রাত ধান কাটা, মাড়াই, সিদ্ধ দেয়া আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষান-কৃষানি। হাওর পাড়ের জয়নগর গ্রামের পাশে প্রখর রোদের মধ্যে ধান শুকানোর খলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক সাদেক আলী। কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, চার ভাইয়ের যৌথ পরিবার। মাসহ পরিবারের ২০ জন সবাই যোগ দিয়েছেন কাজে। পরিবারের মধ্যে বড় ভাইয়ের তিন মেয়ে ও এক ছেলে কলেজে পড়ে। আর বাকিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। বছরে পরিবারের খাবারের জন্য ১২০ থেকে ১৩০ মণ ধানের প্রয়োজন পড়ে। কৃষকদের অবস্থা হলো বেশি ধান উৎপাদন হলে কৃষক ধনী আর ক্ষতিতে ফকির। কারণ এ ধানের উৎপাদনের ওপর সারা বছরের খোরাকসহ পরিবারের সব খরচ চলে। হাওরপাড়ের কৃষক জানান, গত ২০১৭-১৮ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর গত বছর ২০২২ সালের এপ্রিলেও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় গোলায় রাখা ধানও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এবার কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ধান গোলায় তুলতে পারছেন হাওরাঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরগুলোতে বাম্পার ফলন হলেও হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ধান। বেশি লাভের আশায় কৃষক হাওরে দেশি জাতের ধানের চাষাবাদ করছেন না। ফলে দিন দিন হাইব্রিড জাতীয় ধানের দখলে যাচ্ছে জেলার ১৫৪টি ছোট বড় হাওর। এ কারণে হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু ও মজাদার ধান-বেগুনবিচি, লাখাই, টেফি, লাট্টাশইল, গছি, বোরো, আছান, রাতা, বাঁশফুল। এরপরও এই এক ফসলি ধানের উৎপাদন বেশি হলেই কৃষক মহা খুশি। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওর ও বিলে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। চলতি বছর হাইব্রিড ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর ও স্থানীয় ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন বেশি হবে। ৩০ টাকা কেজি ধরে উৎপাদিত এ ধানের মূল্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এদিকে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সঙ্গে ৭৭৬টি হারভেস্টার রয়েছে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯০ ভাগ জমির (১ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর) ধান কাটা হয়েছে। হাওরে ধান কাটা শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে এবার বেশি ধান উৎপাদন হওয়ায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন।