নিচে নামছে পানির স্তর দুঃশ্চিন্তায় কৃষক

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলনকেই দায়ী করছেন পরিবেশবাদী ও সচেতনমহল

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। কোনো কোনো এলাকার মানুষ পানির অভাবে ঠিকমতো গোসল করতে পারছে না। পুকুর ডোবাগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। বড় নদী ছাড়া ছোট নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। অপরদিকে ডিজেল চালিত শ্যালোমেশিনে ও বিদ্যুৎচালিত মোটর পাম্পে পানি না ওঠায় বোরো ও ভুট্টা ক্ষেতে পানি সেচ দেয়ার জন্য কুয়ার মতো ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামানো হচ্ছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। অন্যদিকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ভূগর্ভস্থ থেকে অপরিকল্পিত পানি উত্তোলনকেই দায়ী করছেন পরিবেশবাদী ও সচেতনমহল। এছাড়াও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়াও একটি অন্যতম কারণ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি ১০ বছরে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নামছে। ৩০ বছর আগে যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৩০ ফুটে, অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ৯০ ফুট গভীরে। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের খরা মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর ছিল গড়ে ২০ ফুট ৬ ইঞ্চি, ১৯৯৫ সালে পানির স্তর নেমে দাঁড়ায় ৩০ ফুটে। ২০১০ সালে পানির স্তর নেমেছে ৬৬ ফুটে। ২০১৯ দিনাজপুর জেলায় পানির স্তর নেমে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ ফুটে। ২০২৩ সালে এসে সেটা প্রায় দেড়শ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় কৃষক ধান উৎপাদনে চরম সংকটে পড়েছে। দিনাজপুরের সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, খানসামা, নবাবগঞ্জ, উপজেলায় পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার পানি স্তর নেমে যাওয়ায় ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটরগুলো পানি টেনে তুলতে পারছে না। এতে কৃষকরা বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিন ও মোটরগুলো কুয়ার মতো ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে নিচে নামিয়েছে। টিউবওয়েলগুলোতেও পানি উঠছে না। দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এএন মো. নাইমুল এহসান বলেন, আপাতত জনগণকে টিউবওয়েল বসানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সাবমারসেল, শ্যালো ও তারা পাম্প বসানো হচ্ছে। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ১০২টি ইউনিয়ন রয়েছে। চলতি বছরে ১০টি সাবমারসেলসহ ২৩০০টি শ্যালো ও তারা পাম্প বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। আর বরেন্দ্র অঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে। গড়ে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।