কুড়িগ্রামে বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম জেলায় দিন দিন বাড়ছে বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা। বয়সের শেষ প্রান্তে এসে পরিবারের সঙ্গে অবসর কাটানোর যখন সময়, তখন তারা উপায়ান্তর না পেয়ে পেট বাঁচাতে কর্মযুদ্ধে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকা, পারিবারিক সম্পর্কের ছন্দপতন, বাল্যবিয়ের পর বিবাহবিচ্ছেদকে দায়ী করছেন সুশীল সমাজ। এছাড়া জেলায় কয়েক দশক আগেও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি না মানায় অধিক সন্তান নেয়ার দরুণ পরিবারের কর্তার ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। কথা হয় উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তনুরাম গ্রামের ৭৫ বছর বয়সি অটোচালক খোকা মিয়ার সঙ্গে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার এ ব্যক্তি বলেন, প্রায় ১২০ বছরের বৃদ্ধ মা ফুলজন বেওয়া, স্ত্রী, এক মেয়ে ও নাতি নিয়ে তার সংসার। পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাড় করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অটোচালান। ১৯৭৫ সাল থেকে পায়ে চালিত রিকশা চালাতেন। কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। পরে অচল বাম পা নিয়ে সংসারের বোঝা টানতে বছর তিনেক থেকে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। এ ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করে তা দিয়ে চলে সংসার। খোকার মতো এমন চিত্র জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের আরাজি পলাশবাড়ি গ্রামের দছিমুদ্দিনের। বয়স পেরিয়েছে ৮০ বছর। পাকিস্তান আমল থেকে প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনিও রিকশা চালাচ্ছেন। এ দিয়েই স্বামী-স্ত্রীর পেট চলছে। এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ের পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সন্তানরা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। খোকা মিয়া আর দছিমুদ্দিনের মতো জেলার শত শত বয়স্ক শ্রমিকের জীবনের গল্প প্রায় একই। যে বয়সে বিশ্রাম আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে হাসিখুশি দিন পার করার কথা, সেখানে জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ব্যস্ত কাটছে তাদের দিন। অটোচালক খোকা মিয়া বলেন, বয়স্কভাতা এবং অটো চালিয়ে যা আয় করি তা দিয়ে চলে সংসার। বৃদ্ধ দেখে আগের মতো আর যাত্রী আমার অটোতে ওঠে না। দিনে যা আয় হয় তা দিয়ে দিন চলে যায়। রিকশাচালক দছিমুদ্দিন বলেন, বুড়া মানুষের রিকশায় আর কেউ চড়তে চায় না। আগে আয় ভালো থাকলেও এখন দিনে এক থেকে দেড়শ টাকা হয়। দুই বুড়া-বুড়ির সংসার চলে যায়। মেম্বার-চেয়ারম্যান সরকারি কোনো সহযোগিতা দেয় না।