কবে চালু হবে চিলাহাটি স্থলবন্দর

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নীলফামারী প্রতিনিধি

ব্রিটিশ আমলে প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ছিল উত্তরের জেলা নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি। সে সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে অনেক প্রতিষ্ঠানসহ গড়ে ওঠে শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। তবে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় এখানকার শুল্ক স্টেশন। ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় চেকপোস্টটিও। এর পর বিভিন্ন সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সব শ্রেণিপেশার মানুষের দাবিতে ২০১৩ সালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে চিলাহাটি স্থলবন্দরের গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১০ বছরেও কাগজ-কলমেই আটকে আছে উত্তরবঙ্গের সমৃদ্ধ এ জেলার সেই চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর কাজ।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মানুষের দাবি, বন্দরটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, সঙ্গে আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ বদলে যাবে এ অঞ্চলের জীবনমান। স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি থাকা অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা বাড়বে।

এ ছাড়া সার্কভুক্ত ভুটান, নেপাল আর চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন এক মাত্রা। ঘুচবে বেকারত্ব। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ফলে দেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এতে দ্রুত পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের চিত্র। তবে এত সুযোগ-সুবিধা ও ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও গেজেট হওয়ার পরও কেন চালু হচ্ছে না স্থলবন্দরটি- প্রশ্ন স্থানীয়দের। স্থানীয় বিমল চন্দ্র রায় বলেন, শুধু আমরা শুনি চালু হবে। আজ মন্ত্রী আসে, কাল অমুক আসে; কিন্তু চালু আর হয় না। এটা চালু হলে আর কিছু না হোক আমাদের আর বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে না। এখানেই অনেক কাজ বের হবে। নিজের এলাকায় কাজ করে জীবন চালাব।

স্থানীয় ইলিয়াস হোসেনের বাবা অসুস্থ প্রায় দু’বছর। দু’বার চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছে ভারতে। এর মধ্যে একবার গেছেন মিতালি এক্সপ্রেসে। তবে উত্তরবঙ্গ দিয়ে ট্রেন গেলেও উঠতে ঢাকায় যেতে হয়েছে। ইলিয়াস হোসেন বলেন, বাবাকে নেওয়ার জন্য আমাদের ঢাকায় যেতে হয়েছে। ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা ঢাকায় গেলাম। আবার সেই ট্রেনে উঠে আবারও একই রাস্তা এলাম। কিন্তু এখানে যদি ইমিগ্রেশন থাকলে এত কষ্ট হতো না। স্থলবন্দর থাকলে আমাদের যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু প্রসারিত হতো।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সফিকুল ইসলাম ডাবলু বলেন, চিলাহাটি স্থলবন্দর চালুর জন্য আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ২০১৩ সালে গেজেট হলো, আমরা স্বপ্ন দেখলাম শিগগির চালু হবে; কিন্তু প্রায় একযুগ চলে যাচ্ছে এর কোনো পদক্ষেপ নেই। কবে হবে তা জানি না। তবে যদি চালু হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচবে। আমাদের ইপিজেডসহ এ অঞ্চলের কলকারখানায় মালামাল আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। এটার দাবি আর কী জানাব, আমরা ক্লান্ত। তবে চাই যেন দ্রুত চালু হয়।

নীলফামারী প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক তাহমিন হক ববি বলেন, চিলাহাটি স্থলবন্দরটি এ অঞ্চলের উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি। এটি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম হলেও এর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালের গেজেটেই আটকে আছে এটি। স্থলবন্দরটি বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। তবে স্থানীয় মানুষও ক্লান্ত হয়েছে আন্দোলন করতে করতে।