ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদ্যালয় তৈরিতে কোটি টাকা বৃথা যাচ্ছে

বিদ্যালয় তৈরিতে কোটি টাকা বৃথা যাচ্ছে

কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যমুনা নদীতে চলে গেছে। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে গেটটি। এছাড়া বিদ্যালয়ের পাশেই আলীপুর দারুল উল্ল্যাহ দাখিল মাদ্রাসাটির একাংশ ভেঙে গেছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের চরচন্দনী গ্রামে স্থাপিত চরচন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি ২০২১ সালে যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয় ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি আগের স্থান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি মাদ্রাসার ভাঙাচোরা টিনের ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম চালালেও সেখানে নেই তেমন শিক্ষার্থী। জানা গেছে, টাঙ্গাইলের নদীকেন্দ্রিক পাঁচটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো প্রতি বছরই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এবং ভাঙনের শিকার হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। ভূঞাপুর উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূঞাপুরে যমুনা নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় নদীতে চলে গেছে।

২০০০ সালে উপজেলার নিকরাইলের গোপালগঞ্জ বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার পর গোবিন্দাসীর খানুরবাড়ি এলাকায় দ্বিতীয় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এ বছর সেই বিদ্যালয়টিও ভাঙনের কবলে রয়েছে। এছাড়া ২০০৩ সালে চর কোনাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে যাওয়ার পর ২০০৭ সালে উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় নির্মাণ করা হয়। পশ্চিম দোভায়া ও দোভায়া বিদ্যালয় দুটি ২০১২ সালে ভেঙে যাওয়ায় পশ্চিম দোভায়া বিদ্যালয় মাটিকাটায় এবং দোভায়া বিদ্যালয়টি পাটিতাপাড়ায় নির্মাণ করা হয়। এতে ভাঙনে দোভায়া বিদ্যালয়টির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় তা খুবই কম। এতে প্রতি বছর ভাঙনের কারণে সরকারকে বছরে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হয়। চরচন্দনী গ্রামের ৭০ বছর বয়সি নায়েব আলী বলেন, চরচন্দনী সরকারি বিদ্যালয় যেখানে ছিল তার আশপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছিল। এখন তা নদী। চোখের সামনে নাতি-পুতিদের স্কুলটি ভেঙে গেল। যারা ওই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত তাদের অনেকেই এখন কর্মজীবনে চলে গেছে। অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

বাসুদেবকোল এলাকার আছিয়া বেওয়া বলেন, স্কুল ভেঙে গেলে নাতি-পুতিদের মন ভেঙে যায়। স্কুল ভেঙে গেলে পরবর্তী সময়ে স্কুল দূরে চলে যায়। এতে ছাত্রছাত্রীরাও যেতে চায় না। তাছাড়া চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা এমনিতেই পড়তে চায় না। ভেঙে যাওয়া চরচন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, বিদ্যালয় ভাঙার আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড়শ’। ভেঙে যাওয়ার বছরখানেক পর অন্যত্র শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী আসে না। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ৭০ জন। কিন্তু মাঝেমধ্যে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন আসে। বাসুদেবকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, গত বছর দুইবার বিদ্যালয় স্থানান্তর করতে হয়েছে।

এ বছরও বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন বিদ্যালয়টি নতুন করে কোথায় নিয়ে যাব, সেটি চিন্তার বিষয়। বারবার ভাঙনের ফলে বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী তেমন নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূঞাপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. শরিফুল মণ্ডল বলেন, চরাঞ্চলে বিদ্যালয় অবকাঠামো নির্মাণে ভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ‘চর ডিজাইন’ হিসেবে টিনের ঘর নির্মাণ (লোহার ফ্রেমে) করা হচ্ছে। নতুন করে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত