ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পদ্মায় দেখা মিলছে না ইলিশের

পদ্মায় দেখা মিলছে না ইলিশের

পদ্মা নদীর মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশের সুনাম সবখানে। এক সময় যেখানে পদ্মা নদীতে জাল ফেললে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ত, সেখানে এখন গোয়ালন্দের পদ্মায় দেখা মিলছে না ইলিশের। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের জেলেরা। মাছ না থাকায় অনেক জেলে জাল গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, উত্তাল পদ্মা নদীর সীমানা যেমন ছোট হয়ে আসছে, তেমনি পদ্মা নদীতে ডুবোচরের কারণে নদীতে সৃষ্টি হয়েছে নাব্য সংকট। নেই কোনো গভীরতা। ফলে নদীতে ধীরে ধীরে ইলিশও কমে গেছে। পদ্মা নদীতে গভীরতা না থাকার কারণে আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে জানিয়েছেন জেলেরা। জেলেদের অভিযোগ, প্রজনন মৌসুমে যখন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল তখন অনেক জেলেই সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি। এমনকি সরকারিভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক প্রকৃত জেলে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এখানো সুযোগ রয়েছে।

সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাটের ছাত্তার মেম্বার পাড়া ও কয়েকটি ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে একে একে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে জেলেরাই হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের হাজিরাই উঠছে না। অনেকে ট্রলারের ওপরে রান্না করছেন আবার কেউ পরস্পরের সঙ্গে গল্প করে অলস সময় পার করছেন। জেলে কালিদাস হালদার বলেন, সারাদিন নদীতে জাল ফেললেও কোনো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আড়তদারদের কাছ থেকে নেয়া দাদন পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যাচ্ছে, তাই অনেক জেলে জাল গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা গ্রামের জেলে শিবপ্রসাদ হালদার বলেন, আমি এই পদ্মা নদীতে মাছ ধরি ২৫ বছর ধরে। এ বছর দেখছি নদীতে ইলিশের খুবই আকাল। তারপর নদীতে গভীরতা নেই। সারাদিন নদীতে জাল বেয়ে ১ থেকে ২ কেজি জাটকা পাওয়া যায়। বড় কোনো ইলিশ নদীতে পাওয়া যায় না। মনের দুঃখে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। পাবনা জেলার ঢালার চর এলাকার আরেক জেলে কোরবান শেখ বলেন, সরকারিভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা হলেও প্রকৃত অনেক জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী চাঁদনি-আরিফা মৎস্য আড়তের মালিক মো. চান্দু মোল্লা বলেন, আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে মাছ কিনব, আর কীভাবে এই মাছ অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবসা করব। তারা যেমন মাছ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।

গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার জামান সাবু বলেন, পদ্মায় ইলিশের আকাল চলছে। পানির গভীরতা নেই। নদীতে নাব্য সংকটের কারণে পানি নেই। ইলিশ গভীর পানির মাছ। বড় ইলিশ, রুই ও পাঙাশসহ বড় মাছের চলাচলের জন্য নদীর গভীরতা প্রয়োজন। প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়লে তারা নতুন করে আবেদন করলে নিবন্ধন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত