ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাথরের কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

পাথরের কণায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

দীর্ঘদিন ধরে নিদ্রাহীনতা, মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, বমিভাবসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন শামসুল আলম (৫১)। তিনি কাজ করেন পাথর ভাঙা শ্রমিক হিসেবে। শুধু শামসুল নন, তার মতো অনেকেই ভুগছেন একই সমস্যায়। এসব শ্রমিক শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করেন। কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ছাড়াই কাজ করার ফলে নাক-মুখ দিয়ে পাথরের গুঁড়া ভেতরে ঢুকে ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পাথর ভাঙার কাজ করা শ্রমিকদের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতিকর ‘সিলিকোসিস’ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা মূলত পেশাগত রোগ।

এটি এমন একটি রোগ, যার মূলে রয়েছে ‘ক্রিস্টালাইজড সিলিকা’ বা স্ফটিকাকৃতি বালু বা পাথরের কণা। যেসব স্থানে এমন কণা ওড়ে, সেই পরিবেশে দীর্ঘদিন কাজ করলে বালু বা পাথরের কণা জমে ফুসফুসের উপরিভাগের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে ‘সিলিকোসিস’ হতে পারে। পাথর ভাঙার সময় নিঃশ্বাসের সঙ্গে বালু বা পাথরের কণা ঢুকে ফুসফুসের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এমনকি পাথরের ধূলিকণা নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করায় ফুসফুস কর্মক্ষমতা হারায়। এমনকি মৃত্যুও হয় আক্রান্ত ব্যক্তির। এই রোগের উপসর্গ হচ্ছে- বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং শেষ দিকে শরীর নীল হয়ে যাওয়া। এসব পরিবেশে কাজের সময় নাক-মুখে মাস্ক বা গামছা দিয়ে ঢাকতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এছাড়া চশমা ব্যবহার এবং হাত মোজা ও বিশেষ পোশাক পরার কথাও বলেছেন তারা। তবে বেশিরভাগ পাথর ভাঙা শ্রমিকের এ বিষয়ে তেমন কোনো সচেতনতাই নেই। অন্যদিকে শ্রমিকদের সেফটি পোশাক পরে কাজ করার তাগিদ দিলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না বলে দাবি মালিকদের। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রোগটি সম্পর্কে সচেতনতায় শ্রমিক-মালিকদের নিয়ে নিয়মিত সভা সেমিনার করা হয়। শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ীতে তেমন কোনো কর্মক্ষেত্র না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই পাথর শিল্পে কাজ করছেন স্থানীয়রা। আর এতে মারাত্মক ব্যাধি ‘সিলিকোসিস’ ঝুঁকিতে রয়েছেন বন্দরের শত শত শ্রমিক।

শ্রমিক নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পাথর ভাঙা মেশিনের উচ্চ শব্দ আর ধুলা-বালুর মধ্যে কাজ করতে হয় আমাদের। রাতে মাথাব্যথা ও নিদ্রাহীনতায় ভোগেন অধিকাংশ শ্রমিক। পাথর থেকে হওয়া ধুলা শ্রমিকদের নাক ও মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্রমিকদের অনেকেই দীর্ঘদিন কাজ করার পর শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরসহ নানান রোগে আক্রান্ত হন। বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মাস্ক ও গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে উৎসাহিত করি। তবে অনেকেই অসচেতন থাকেন। আমরা সবসময় শ্রমিকদের পক্ষে আছি। ‘সিলিকোসিস’ রোগটি সম্পর্কে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বাহাদুর শাহ মামুন বলেন, ‘সিলিকোসিস’ শব্দটি বাংলাদেশে খুব বেশি পরিচিত নয়। কিন্তু এটি একটি মরণব্যাধি, যা ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, সর্দি-কাশি, জ্বর সবসময় লেগে থাকে, শরীর দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে ও ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। এক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। সাধারণত পাথর ভাঙার সময় সিলিকা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহের ফুসফুসে প্রবেশ করে। ভেতরে গিয়ে ফুসফুসের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়। পাথরের ধূলিকণা নাক, মুখ এমনকি চোখের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করায় ফসফুসের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত