ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝালকাঠির লবণ শিল্পের দুর্দিন

ঝালকাঠির লবণ শিল্পের দুর্দিন

সনাতন পদ্ধতিতে যাত্রা শুরু হলেও এক সময় জেলায় ছোটবড় ২০টি লবণ উৎপাদন কারখানা ছিল। তবে গ্যাস সংকটসহ নানান কারণে অনেকগুলো কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে জেলায় ৯টি কারখানা চালু রয়েছে। যার মধ্যে ৩টি সেট্রিফিউজ (সেমি ভ্যাকুয়াম) পদ্ধতির এবং বাকিগুলো সনাতন পদ্ধতির, যেখান থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার ৫০০ টন ভোজ্য লবণ ও ৭ হাজার টন ইন্ডাস্ট্রি লবণ উৎপাদিত হয়। যা ঝালকাঠি জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের কয়েকটি জেলায় রপ্তানি করা হয়। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঝালকাঠির উৎপাদিত লবণ বিক্রি শুরু হয়েছে।

লবণ মিল মালিক সালাউদ্দিন আহমেদ মালেক বলেন, নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে আমাদের ঝালকাঠির লবণ শিল্প কোনো রকম টিকে আছে। করোনার সময় মিল মালিকরা অনেক টাকা গচ্চা দিয়েছেন। সেই সময়ে উৎপাদন থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের জন্য যদি কম সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ঝালকাঠির লবণ শিল্প আরও প্রসারিত হবে। সেই সঙ্গে কারখানায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকায় একটি মিলে যখন ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ হয় ৫০০ টাকা সেখানে আমাদের এখানে খরচ হয় ৯০০ টাকা।

এই যে উৎপাদন খরচের পার্থক্য, সেটাই এখানের মিলগুলোর জন্য বিশাল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারত ও চীন থেকে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে তা খাবার লবণ হিসেবে বিক্রি করছে। এগুলো দামে সস্তা; কিন্তু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত লবণের দাম তুলনামূলক একটু বেশি, তবে মানবদেহের জন্য উপকারী। এসব কারণে লবণ মিল মালিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শ্রমিক নেতা মোস্তফা হাওলাদার বলেন, ঝালকাঠি লবণ মিলগুলোতে এক সময় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করত। বিভিন্ন কারণে মিলগুলো বন্ধ হওয়ায় সেটা এখন এক হাজারে নেমে এসেছে।

মিলগুলো ফের চালু হলে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হলে আমরা শ্রমিকরাও লাভবান হবো। এখানে আরও শ্রমিক কাজ করতে পারবে। বর্তমানে ৯টি কারখানা চালু রয়েছে যেগুলোর বেশিরভাগই বাসন্ডা নদীর দুই তীরে অবস্থিত। যেখানে ১ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। যার কারণে প্রত্যক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১ হাজার পরিবার, যাদের সংসারের আয়ের উৎস এই কারখানার শ্রমিকরা। সে হিসেবে জেলার অর্থনীতিতে তাদের বিশেষ একটা ভূমিকা রয়েছে। এখানে শ্রমিকের একটা অংশ নারী শ্রমিক, যাদের কাজ মূলত প্যাকেজিং করা। এরমকই একজন শ্রমিক সুফিয়া বেগম বলেন, আমি এখানে প্রায় ১৮ বছর ধরে কাজ করছি।

আমার পরিবারের ভরণপোষণ আমার ওপরই নির্ভরশীল। তাই এখানের আয় দিয়েই আমার পরিবার কোনো রকম টিকে আছে। সবকিছুর দাম বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু মিল মালিকদেরও কিছু করার নেই। কারণ অন্যান্য জায়গার মিলগুলোর চেয়ে এখানে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাই তাদের মুনাফা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এসব কারণে বিগত বছরে প্রায় অনেকগুলো মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত