ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেয়ারার কম ফলন মলিন চাষির মুখ

পেয়ারার কম ফলন মলিন চাষির মুখ

ঝালকাঠিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পেয়ারাগাছে ফুল এলেও ঝরে পড়ছে। এতে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় ভেঙে পড়েছেন পেয়ারা চাষিরা। জানা গেছে, কম-বেশি সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পেয়ারার চাষ হলেও বরিশালের বানারিপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশালের বানারিপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার হাজারো মানুষের কাছে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ‘পেয়ারা’। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ থাকে।

এদিকে ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামের বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। তবে এবার গাছগুলোতে দেরিতে ফুল এসেছে আবার বৃষ্টি না হওয়ায় সেই ফুল ঝরে পড়ছে অনেকটাই।

জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়েও পেয়ারা কুশিতেই আছে। এখনো বিক্রির উপযোগী হতে আরও মাসখানেক লাগবে। তাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। স্থানীয় চাষিরা জানান, আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। এ আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। ২০২২ সালে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টন পেয়ারা। কিন্তু এবছর ফলন কম হওয়ায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে পেয়ারা চাষিদের।

কৃষক পঙ্কজ বড়াল বলেন, মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। এর পর কাদা মাটি দিয়ে গোড়া ঢেকে দিয়েছি। তাতে প্রতিটি গাছের গোড়ায় গড়ে তিন শতাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল এবছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝরে পড়েছে। লাভ তো দূরের কথা, আসল খরচের টাকাই ওঠে কি-না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পঙ্কজ বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য অনেক কিছুই দেয়। আমি একজন প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষক। সারাদিনই কৃষি নিয়ে পড়ে থাকি। তাই কারও কাছে যেতে না পারায় কৃষি সার ও বীজ কোনো কিছুই পাইনি। কৃষক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন, পেয়ারা আমাদের মৌসুমি আয়ের একমাত্র অবলম্বন। পেয়ারার ফলন ভালো হলে আমাদের সচ্ছলতা আসে। পানির ওপরই ভাসমান হাটে বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয়। অস্থায়ী কিছু দোকানপাট বসে পাইকার, পর্যটক/দর্শনার্থীদের আপ্যায়নের বা ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে ব্যবসা করে আর্থিকভাবে লাভবান হন বিক্রেতারা। কিন্তু পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় পাইকার আগমনসহ সব কিছুতেই এর একটা খারাপ প্রভাব পড়বে।

পর্যটন ব্যবসায়ী নিশিথ হালদার বলেন, পেয়ারা মৌসুমকে ঘিরে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক আসেন। আগে শুধু নৌপথে আসতেন, এখন সড়কপথ ভালো হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই যাতায়াত সম্ভব বলে পর্যটকদের সংখ্যা গত বছর থেকে বাড়ছে। পেয়ারা চাষিদের বাগানে ঢুকে ক্ষতিসাধন হওয়ায় আমরা পেয়ারা বাগানে নান্দনিক ভ্রমণের সুযোগ করেছি। কিন্তু এ বছর যেভাবে পেয়ারার ফলন, তাতে তেমন পর্যটক বা দর্শনার্থী আসবেন বলে মনে হয় না।

কারণ পর্যটক বা দর্শনার্থীরা ফিরে যাওয়ার সময় কিছু পরিমাণ পেয়ারা নিয়ে যান। পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় সবদিক থেকেই লোকসানের মুখে পড়বে এখানকার লোকজন। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফুল কিছুটা ঝড়ে গেছে। তবুও যা আছে তা ঠিকমতো টিকে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনার সার ও বীজ সুষম বণ্টন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত