ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংকটে সুন্দরবন

দেড় লাখ জেলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

দেড় লাখ জেলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

৬৫ দিনের চলমান নিষেধাজ্ঞায় আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছেন সুন্দরবনের নদনদীসহ সাগরকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করা দেড় লাখেরও বেশি জেলে। মৎস্য বিভাগের ২০ মে থেকে চলা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আলাদা করে গত বৃহস্পতিবার থেকে ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যাচ্ছে বনবিভাগ। ফলে টানা ১০৪ দিনের দেয়া নিষেধাজ্ঞা জেলেদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুরবস্থায় পড়তে যাচ্ছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জেলেরা।

মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার থেকে ৯২ দিনের জন্য সুন্দরবনের নদনদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যাচ্ছে বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে পারবে না জেলেরা। এমনকি বিপাকে পড়বে পর্যটক বহনকারী পাঁচ শতাধিক ট্রলার শ্রমিক পরিবার। শ্যামনগর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে সাতক্ষীরা রেঞ্জের শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩১ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে যাদের সাগর-সুন্দরবনের নদনদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরা ছাড়া অন্য কোনো পেশা নেই এমন ১২ হাজার ৮৭৯ জনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। তবে যারা সাগরে মাছ ধরেন না, শুধু সুন্দরবনের নদনদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। এ হিসাবে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১৮ হাজার ৫৭৬ জন নিবন্ধিত জেলে নিষেধাজ্ঞার ১০৪ দিন সুন্দরবনে মাছ ধরতে পারবেন না। এমনকি কোনো সহায়তাও পাবেন না তারা। এর বাইরে আরও কয়েক হাজার অনিবন্ধিত জেলে রয়েছেন যারা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবী বাওয়ালি ও মৌয়াল। দীর্ঘ ৩ মাস বেকারত্বের মধ্যে কাটাবেন তারা। ফলে পরিবারগুলো পড়েছেন মানবেতর জীবনযাপনের শঙ্কায়। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি শ্যামনগর শাখার সভাপতি জি এম মনসুর আলম অভিযোগ তুলে জানান, প্রকৃত জেলেদের মাঝে সরকারি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে না। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা দলীয়করণের মাধ্যমে তালিকা করে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সরকারি সহযোগিতা দেয়ার ব্যবস্থা করছেন। তাদের কাছে বারবার অনুরোধ করার পরও আমলে নিচ্ছেন না।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, শ্যামনগর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৫৩ জন, আশাশুনি উপজেলায় ৮ হাজার দুজন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৭১ জন ও তালা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। সাগরে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত এসব জেলের মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ৮ হাজার ৩২৪ জন ও আশাশুনি উপজেলার ৪ হাজার ৫৫৫ জনকে গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই এ ৬৫ দিনের জন্য মাথাপিছু ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল সমিতির সভাপতি সুশান্ত মণ্ডল বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে দেড় লাখেরও বেশি জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়াল সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। ১০৪ দিন তারা সুন্দরবনে ঢুকতে পারবে না। এর মধ্যে মাত্র শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১২ হাজার ৮৭৯ জনকে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হবে। তাহলে অন্যরা এ সময় কীভাবে চলবেন, তা কেউই জানে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত