বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাবনায় আশঙ্কাজনকহারে কমছে ব্যাঙের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ব্যাঙ বিলুপ্তির পথে। এতে চরম হুমকির মুখে পড়বে কৃষি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। পরিস্থিতি না বদলালে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে পুরো খাদ্য শৃঙ্খলে। জানা গেছে, চলনবিল, গাজনা (গণ্ডহস্তি), বিল কুড়ালিয়া, ঘঘুদহ বা বিল গ্যারকার মতো বড় বড় বিল সমৃদ্ধ পাবনা জেলা। ফলে দূর অতীত থেকেই এ অঞ্চল ছিল ব্যাঙে ভরপুর।
ফসলি জমি এবং ধানক্ষেতে দুই প্রজাতির কোলা ব্যাঙ, কুনোব্যাঙ, কয়েক রকমের ঝিঝি ব্যাঙ, কটকটি ব্যাঙসহ প্রায় ১০ প্রজাতির ব্যাঙ দেখা যেত। কিন্তু গত দুই দশকে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, কৃষিজমিতে কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এদিকে জলাভূমি কমে যাওয়ায় সংকুচিত হচ্ছে ব্যাঙের আবাস। ব্যাঙ কমতে থাকায় অন্য প্রাণীর খাদ্য উৎসেও সংকট তৈরি হচ্ছে। কারণ, অনেক জলজ প্রাণীর খাবার ব্যাঙ।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, বিগত বছরগুলোতে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ব্যাঙের প্রজননে প্রভাব ফেলেছে। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় থেকে বর্ষার পুরো সময়টা ব্যাঙের প্রজননের আদর্শ সময়। ব্যাঙাচি বেঁচে থাকার জন্য জমে থাকা পানি দরকার। কিন্তু চলতি বছরের মতো গত কয়েক বছরই অনাবৃষ্টিতে পানির অভাবে ব্যাঙাচিগুলো টিকতে পারছে না। স্থানীয় প্রবীণরা জানিয়েছেন, আগেও পুকুরে মাছ চাষ হতো। তবে সেখানে বাইরের পানি বা বানের পানি ঢুকত। কিন্তু এখন সুরক্ষিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। এখন পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে ব্যাঙসহ সব রকম জলজ প্রাণী নির্মূল করার পর সেখানে মাছের পোনা ছাড়া হয়। তারা আরও বলছেন, আগে বিলে প্রায় ১২ মাসই পানি থাকত। কিন্তু এখন শীত আসতে না আসতেই বিল শুকিয়ে যায়। ফলে বিলগুলোতেও ব্যাঙ থাকতে পারে না।
মাছ মারার সময়ও রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়। এতেও ব্যাঙের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষিকাজে পোকা দমনের জন্য কীটনাশক কিংবা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার ব্যাঙের জন্য ক্ষতিকর। এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে যেসব পোকামাকড় মরে যায়, সেই সব মৃত বিষাক্ত পোকামাকড় পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ খেয়ে মারা যাচ্ছে। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম বাজারের ভ্যানচালক আবুল কাশেম বলেন, ‘আগে বৃষ্টির রাতি ব্যাঙের ডাকে কান ঝালাপালা হয়া যাত। এহন ব্যাঙই নাই, ডাকপি কিডা!’ পাবনার কৃষিকর্মী আব্দুল খালেক তার দীর্ঘ জীবনের প্রশিক্ষণ দানের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ব্যাঙ ক্ষেতের নিচের দিকের পোকা খায়। আর নিচের দিকে থাকে ফসলের ক্ষতিকর পোকাণ্ডমাকড়।
ফসলি জমির ওপরের দিকে থাকে উপকারী পোকা। সে হিসেবে ব্যাঙ কৃষকের পরম বন্ধু। পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র জানান, দিন দিন জেলায় জলাভূমি কমে যাওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ। তীব্র খরার কবলে পড়ে অনেক প্রজাতির ব্যাঙই মারা যাচ্ছে।