ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শহরের পুকুর আবর্জনায় ভরা

শহরের পুকুর আবর্জনায় ভরা

কিশোরগঞ্জ শহরের পুকুরগুলো আবর্জনা ও ময়লায় ভরাটের পথে। কিছু আবার ভারাট করে বাসা-মার্কেট তৈরি করেছেন মালিক নিজেরাই। কিছু পুকুর পৌরসভার আবর্জনা ও ময়লায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে যে পুকুরগুলো এখনো রয়েছে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সেগুলোর পানি। এতে নষ্ট হচ্ছে শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। ফায়ার সার্ভিসের শঙ্কা, পুকুরগুলো ভারাটের কারণে শহরে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দেখা দেবে পানি সংকট।

জানা গেছে, এক সময় কিশোরগঞ্জ শহরে শতাধিক পুকুর ছিল। এসব পুকুরের পানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতেন। কিন্তু আবর্জনা ও ময়লায় ভরাট হয়ে শহর থেকে পুকুরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার তথ্যমতে পৌর শহরসহ আশপাশের এলাকায় ১৮৮টি পুকুর বা জলাধার ছিল। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ শহরে ২৭টি পুকুর কোনোমতে টিকে রয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহারের উপযোগী ১৭টি পুকুর। শহরে ৮টি সরকারি পুকুরও রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের নগুয়া শেষ মোড়ের পুকুরের বেশিরভাগ অংশ ভরাট করে মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। হয়বতনগর এলাকার একটি পুকুরের অর্ধেক মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। নগুয়া হাসমত উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিমের কোনা ভরাট করে ছোট একটি দোকান তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া পুকুরটিতে ময়লা ফেলায় পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিন্নগাঁও এলাকার একটি পুকুরের মালিক সুশান্ত বসাক জানান, তাদের পুকুরটির পানি এখন আর আগের মতো ভালো নেই। এ পানিতে গোসল করলে শরীর চুলকায়। তার দাবি, আশপাশে পৌরসভার ডাস্টবিন না থাকায় অনেকেই লুকিয়ে পুকুরে ময়লা ফেলে। হযরত আলী নামের এক বাসিন্দা বলেন, আগে আমাদের এলাকায় অনেক পুকুর ছিল। এখন আর সেই পুকুরগুলো নেই। আমাদের গোসল করা ও কাপড় ধোয়া এই পুকুরের পানিতেই হতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আমরা পৌর শহরের পুকুর রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছি। কয়েকটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছিল, তা আমরা ঠেকিয়েছি। মূলত পৌর এলাকার পুকুর বা জলাধার রক্ষার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো পুকুর বা জলাধার ভরাট করার সুযোগ নেই। কিন্তু শহরের বেশিরভাগ পুকুরই ভরাট হয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলো রক্ষার চেষ্টা আমরা করছি। সম্প্রতি রথখলা পুকুরটি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন মাস্টার আবুজর গিফারী বলেন, শহরে বড় ধরনের রিজার্ভার নেই। তাই অগ্নিকাণ্ড হলে পুকুরের পানিই ব্যবহার করতে হবে। যেভাবে পুকুর ভরাট হচ্ছে, তাতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির সংকটে পড়তে হবে। কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, পৌরসভায় সরকারি পুকুরের সংখ্যা ৮টি। এ পুকুরগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরের কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। আমরা যদি জানতে পারি কোনো পুকুর ভরাট করা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ জলাধার সংরক্ষণের জন্য সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত