ঢাকা ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তরমুজ চাষে লাভবান শামীম

১৩ হাজার টাকা পুঁজিতে দুই মাসে লাভ ২ লাখ!
তরমুজ চাষে লাভবান শামীম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জংলী গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহম্মেদ। জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি দিলেও সেখান থেকে হতাশা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বাড়িতে এসে মাঠে চাষাবাদ করার কথা ভাবেন শামীম। এরপর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেন উচ্চমূল্যের ফসল চাষের। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর ২০ শতক জমিতে প্রদর্শনী হিসেবে চাষ করেন বারোমাসি তরমুজের। মাত্র ২ মাসেই ওই জমি থেকে তার ২ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি। জমিতে ঘুরে দেখা যায়, ছোট ছোট মাচা। বাঁশের বাতার উপরে পলিথিনের জাল দিয়ে মাচায় ছাউনি দেয়া। পুরো মাচাগুলো ভরে আছে সবুজ পাতায়। মাচার নিচে ঝুলছে হলুদ ও কালো রংয়ের বাহারি তরমুজ। তরমুজগুলো যাতে পড়ে না যায়, এজন্য জাল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। খুব কম সময়ে এ ফসলে অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকায় চাষিদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। শামীম আহম্মেদ বলেন, আমি দীর্ঘ ৯ বছর ওমানে ছিলাম। দেশের বাইরের জীবনটা অনেক কষ্টের। তাই বাড়িতে ফিরে এসে ভাবলাম কৃষিকাজ করে উন্নতি করা যায় কি-না। পরামর্শ নিতে উপজেলা কৃষি অফিসে গেলে তারা উচ্চমূল্যের ফসল চাষের কথা জানায়। এরপর আমি মোবাইলে বিভিন্ন ফসলের আবাদ কীভাবে করে সেগুলো দেখি। একসময় এ এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন আমাকে জানান, গ্রীষ্মকালীন সময়ে তরমুজ চাষ বেশি লাভজনক। তারপর যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তারা আমাকে ২০ শতাংশ জমি প্রদর্শনী হিসাবে দেয়। তাদের সহযোগিতায় আমি এবার ইয়োলো গোল্ড (হলুদ) ও স্মার্ট বয় (কালো) জাতের তরমুজের চাষ করেছি। তিনি বলেন, প্রথমে এ তরমুজের বীজ সংগ্রহ করি। পরে যেহেতু এ চাষ এ এলাকায় নেই তাই নিজে নিজেই চাষ শুরু করি। এজন্য কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ নিয়েছি। জমিতে কীটনাশকের পরিবর্তে আমি জৈবপদ্ধতি ব্যবহার করেছি। এজন্য আমি হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করেছি। সেই সঙ্গে আমি মালচিং ব্যবহার করায় সেচ ও শ্রমিক খরচ অনেক কম হয়েছে। ২০ শতক জমিতে মাত্র ১৩ হাজার টাকা খরচ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবাও আমাকে অনেক নিষেধ করেছেন যে, এই এলাকায় তরমুজ হয় না। আর মাচায় তরমুজ হবে তারা কেউ আশাও করেনি। যখন ছোট ছোট তরমুজ ধরে আবার বাবা বাড়িতে গিয়ে বকাবকি শুরু করে যে, ছোট ছোট তরমুজের গুটিগুলো নষ্ট হয়ে হলুদ হয়ে গেছে। এ হবে না গাছ কেটে ফেলতে হবে। তখন আমি তাকে বোঝাই যে এর রঙ-ই এমন হলুদ। বীজ রোপণের পরে মাত্র ৬৫-৭০ দিনের মাথায় আমি তরমুজ পেয়েছি। খুবই সুন্দর সুন্দর হলুদ, কালো তরমুজ। দেখতে বাঙির মতো হলেও ভেতরটা তরমুজের মতো টকটকে লাল এবং মিষ্টি বেশি। অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে এ চাষে। আমি তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি মাত্র ১৩ হাজার টাকা খরচ করেছি সব মিলিয়ে। আমার এই জমিতে এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এখনও গাছে ১২০০-১৫০০ মতো তরমুজ রয়েছে। যার এক একটির ওজন প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি গড়ে। স্থানীয় বাজারেই আমি চাহিদার মতো তরমুজ দিতে পারছি না। ৭০ টাকা কেজি হিসাবে ক্রেতারা মাঠ থেকেই তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত