গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন কমতে শুরু করেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। গত সোমবার বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত রোববার রাতে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত সোমবার সকালে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি দশমিক ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এর পর দুপুর থেকে পানি আরও কমতে শুরু করেছে। আরও পানি কমে যেতে পারে। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দোমহনী বন্যা পূর্বাভাস ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভারতের গজলডোবা ও মেখলিগঞ্জ (বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত) তিস্তা ব্যারাজে বেশ কিছু জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারত তাদের এলাকার মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে গত তিন দিন ধরে হলুদ সংকেত জারি রেখেছে। বর্তমানে মেখলিগঞ্জে তিস্তার পানি ৬৫.৫০ সেন্টিমিটার (৬৫.৯৫ বিপৎসীমা) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যেই রয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী এলাকার নদীর চরাঞ্চলের নিচু এলাকার অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। খালিশা চাঁপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এখনো বন্যা দেখা না দিলেও কয়েক জায়গায় নদীভাঙনের খবর পেয়েছি।