ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় যে ১১ খাবার

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় যে ১১ খাবার

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু অল্পবয়সে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ না। মাঝেমধ্যে এটি স্বাভাবিক জীবনযাপনেও বাধা সৃষ্টি করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাধারণত নানান রকম কৌশল ও চর্চার কথা বলা হয়। তবে অনুশীলনের পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের উপাদানও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া উচিত। এমন কিছু খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হলো।

১) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ: সাধারণত মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে ধরা হয়। তবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। মানুষের মস্তিষ্ক স্নায়ু কোষ তৈরি করতে ওমেগা-৩ ব্যবহার করে এবং এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো শেখা এবং স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অপরিহার্য। এটি মানসিক পতনকে ধীর করতে পারে এবং আলঝেইমার রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। সাধারণত স্যামন, ট্রাউট, টুনা, সার্ডিন ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি পাওয়া যায়।

২) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কফি: কফির দুটি প্রধান উপাদান- ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যর জন্য অনেক উপকারী। ক্যাফেইন সেবনের ফলে মনোযোগ এবং সতর্কতা বৃদ্ধি হয়। এটি মস্তিষ্কের ডোপামিনের মতো ভালো নিউরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধি করে যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক। দীর্ঘমেয়াদে কফি পান পারকিনসন এবং আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।

৩) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্লুবেরি: ব্লুবেরিতে থাকা কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান মস্তিষ্কে প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও অনেক উপকারী।

৪) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে হলুদ: মস্তিষ্কের বিকাশের পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হলুদের বিকল্প নেই। হলুদের মধ্যে থাকা সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ। এসব উপাদান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এটি আলঝেইমার আক্রান্তদেরও স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি বিষণ্নতা কমানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের নতুন কোষ বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

৫) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্রোকলি: ব্রোকলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন কে উপাদান স্মৃতিশক্তি ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ব্রোকলিতে আরো কিছু যৌগ রয়েছে যা মস্তিষ্কে প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব দেয় এবং নানারকম ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৬) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজ এক ধরনের সুপার ফুড যেটাতে ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, আয়রন এবং কপার রয়েছে। এসব উপাদান শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব দেয় এবং মস্তিষ্ককে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া এসব উপাদান মাইগ্রেন, বিষণ্নতা এবং মৃগীরোগের ঝুঁকি কমিয়ে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

৭) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেট এবং কোকো পাউডার ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ কয়েকটি মস্তিষ্ক-উদ্দীপক যৌগ দ্বারা পরিপূর্ণ। এসব উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ধীর করে তোলে। ৯০০ জনেরও বেশি লোকের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা চকলেট বেশি খান তাদের স্মৃতিশক্তি চকলেট কম খাওয়া মানুষের তুলনায় বেশি।

৮) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বাদাম: গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত বাদাম খাওয়া সুস্থ সবল হার্টের পাশাপাশি একটি সুস্থ মস্তিষ্ক পেতে সাহায্য করে। বাদামের থাকা পুষ্টি উপাদান, যেমন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই অনেক উপকারি। ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বাদাম খেয়েছেন এমন মহিলাদের স্মৃতিশক্তি খুবই তীক্ষè। ৯) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কমলা: রক্তে ভিটামিন সি-এর পর্যাপ্ত মাত্রা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সিদ্ধান্তের গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক। আর ভিটামিন সি-এর শক্তিশালী উৎস হলো কমলা। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, ভিটামিন সি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে।

১০) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ডিম: ডিম হলো ভিটামিন বি৬ এবং বি১২, ফোলেট এবং কোলিনসহ মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভালো উৎস। কোলিন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা শরীরে অ্যাসিটাইলকোলিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে যা মন ভালো রাখার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১১) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গ্রিন টি: গ্রিন টিতে থাকা এল-থেনাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে রক্তের মধ্যে মিশে নিউরোট্রান্সমিটার এঅইঅ-এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে যা উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।

এটি মস্তিষ্কে আলফা তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সিও বাড়ায় যা ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক। গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে মস্তিষ্ককে মানসিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করে আলঝেইমারস এবং পার্কিনসন্সের ঝুঁকি কমায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত