শীতে একটি কমন ও স্বাভাবিক লক্ষণ হলো অ্যালার্জি। এই সময়ে যে কারণে অ্যালার্জির প্রভাব ফেলে সেগুলো জেনে রাখা দরকার ধুলো ও দূষণ-শীতের মৌসুমে বাতাস শুষ্ক থাকে, অন্যদিকে গ্রীষ্মের সময় বাতাসের তুলনায় বেশি দূষণ ধরে রাখে। বাতাসের ধুলোবালি এবং অন্যান্য দূষণ মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। শীতে শিশুদের অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে। আবার অনেকের ছোটবেলায় অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলেও, পরবর্তীতে নতুন করে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চললে অ্যালার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকর জিনিস থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়। তবে কখনো কখনো কিছু জিনিসকে এটি ভুলে ক্ষতিকর ভেবে বসে, যা আসলে ক্ষতিকর নয়। এসব জিনিসের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরে অ্যালার্জি দেখা দেয় তা হলো : ধুলাবালি, ঠান্ডা আবহাওয়া, ঘাম, গৃহপালিত পশু-পাখি, পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু, সূর্যরশ্মি, ডাস্ট মাইট, মোল্ড বা ছত্রাক, বিভিন্ন ঔষধ, কীটনাশক, ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ইত্যাদি। অ্যালার্জিযুক্ত খাবার থেকে সাবধান চিংড়ি, বেগুন, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, বাদাম, এ ছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম ও দুধেও অ্যালার্জি হতে পারে। একেকজন মানুষের একেক ধরনের জিনিস অথবা খাবারে অ্যালার্জি থাকতে পারে। তাই কোনো ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে এলে অথবা খাবার খেলে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এটি খুঁজে বের করতে পারলে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।
অ্যালার্জির লক্ষণ : চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া, শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া, চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া, শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া।
চিকিৎসা : শীতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে অ্যালার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যেসব খাবার ও ওষুধে অ্যালার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। হাঁপানি অথবা শ্বাসনালীর অন্য কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবিলায় শারীরিক ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও শ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ।