স্ট্রোক প্রতিরোধে চাই সচেতনতা
ডা. এম ইয়াছিন আলী
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্ট্রোক এখন সারাবিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম। কারণ একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন মানুষ স্ট্রোক আক্রান্ত হয়, যার বেশিরভাগই মৃত্যুবরণ করে, এর কারণ এই ব্রেইন স্ট্রোক। তাছাড়া নন কমিউনিকেশন ডিজিজ হিসাবে স্ট্রোককে এখন তৃতীয় মৃত্যর কারণ বলা হয়। সচেতনতা তৈরি করা এখন সবার দায়িত্ব।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি’। আমরা জানি স্ট্রোক দুই প্রকারের হয়ে থাকে,
১. ইসকেমিক স্ট্রোক- ব্রেনের অভ্যন্তরীণ রক্ষানালীগুলোর মধ্যেকার রক্ষ সঞ্চালন কমে গেলে, অর্থাৎ রক্তনালীগুলোর মধ্যেকার জমা হয়ে থাকা চর্বি যা মেডিকেল ভাষায় থ্রম্বো এম্বোলিজমের কারনে হয়ে থাকে যাকে বলে।
২. হেমোরেজিক স্ট্রোক- যা ব্রেইনের অভ্যন্তরীণ রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে ব্রেইনের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে. যা আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন- শরীরের একপাশ ঝিমঝিম বা অবস অবস মনে হওয়া অথবা শক্তি কমে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া অথবা আক্রান্ত পাশের হাত-পা, নাড়াতে না পাড়া ইত্যাদি; কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- ইস্কেমিক স্ট্রোক বা হেমোরেজিক স্ট্রোক উভয়েরই উপসর্গ একই তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই খুবই জরুরি। কারণ দুই ধরনের স্ট্রোক-এর চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা জানি যে, কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। অতএব, কীভাবে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারি।
(১) ধূমপান বন্ধ করা (২) ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা (৩) চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া অর্থাৎ যাদের শরীরে রক্তে চর্বির পরিমান বেশি তাদের চর্বি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া (৪) নিয়মিত ব্যায়াম করা (৫) স্ট্রেস বা দুঃচিন্তা না করা ইত্যাদি। এখন আসুন যখন একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শরীরে একপাশ প্যারালাইসিস বা পক্ষঘাগ্রস্ত হয়ে গেলেন অর্থাৎ তার করণীয় কী? অনেকেরই ধারণা এই ধরনের প্যারাইসিসের কোনো চিকিৎসা নেই, এটা একেবারেই ভুল কথা এখন বিশ্বে খুবই উন্নতমানের চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে যা বাংলাদেশে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আশা করি শুরু হবে, সেটি হলো- একটি রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি তার রোগ নির্ণয় করা যায়, যে ইস্কেমিক স্ট্রোক-এর কারণে প্যারালাইসিস হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়। তাহলে থ্রোম্বো অ্যাম্বোলিক এজেন্ট ইনজেকশন আকারে দিলে রোগী খুবই দ্রুত সুুস্থ হয়ে যেতে পারে; কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সচেতনার অভাবে দেরিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, যার ফলে এই সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখন বলতে পারেন, রোগীটি স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন তার আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে কি? হ্যাঁ সুযোগ আছে; কিন্তু যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে স্ট্রোক এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে এবং নির্ণয় করতে হবে কি ধরনের স্ট্রোকে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এবং নির্ণয় পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা দুই ধরনের ১. মেডিসিন বা সার্জারি যা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রেইনের রক্ষ চলাচল বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অন্য দিকে হোমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত সরানোর জন্য কিছু কিছু রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।
২. পুনর্বাসন চিকিৎসা : এটি একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন রোগীর ফিজিক্যাল বিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অকুপেশনাল বিহ্যাবিলিটেশন, আবর কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কথা বলতে অসুবিধা দেখা দেয় যা মেডিকেল পরিভাষার এফাশিয়া বলা হয়ে থাকে তার ক্ষেত্রে প্রয়োজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাইেয়েজ পুনর্বাসন, তাই পুনর্বাসন চিকিৎসাটি হওয়া উচিত একটি মাল্টিডিসিলিনারী টিম এপ্রোচ যার মাধ্যমে একটি রোগী যেন তার সবগুলো অসুবিধা থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং এই সমন্বিত চিকিৎসা পেলে একজন রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।