বছরের অন্য সময়ের তুলনায় পবিত্র রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়। সেই সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশের সময়টাও পরিবর্তন হয়। রমজানে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শারীরিক অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে মুখের যে লালা বা স্যালাইভা থাকে তার পরিমাণ কমে যায়। যার দরুণ মুখ সব সময় শুষ্ক হয়ে থাকে। রমজানে সাহ্?রির পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ইফতারে সময় বেশিরভাগই মিষ্টি খাবার যেমন খেজুর, জিলাপি, রসগোল্লা বা রসমালাই ইত্যাদি মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে থাকে তাই ইফতারের পরও একবার দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া ভালো। কারণ শর্করা জাতীয় উপাদান দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে।
রমজানে দাঁতের যত্নে- ১) সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। তবে টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার সময় অসাবধানতাবশত পেস্ট যদি গলার ভেতরে ঢুকে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে যাবে। তা ছাড়া টুথপেস্ট ব্যবহার করার সময় টুথপেস্টের স্বাদ এমনিতেই গৃহীত হয়ে থাকে। আর কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা নষ্ট না হলেও মাকরুহ হয়ে যায়। ২) ইফতারির পর এবং সাহরির আগে কমপক্ষে আট থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
৩) বেশি বেশি শাকসবজি ও ভিটামিন-সি-সমৃদ্ধ খাবার খান। বেশি তেলচর্বি ও মসলাজাতীয় ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। ৪) দাঁতের মাঝে খাদ্যকণা জমে থাকলে প্রয়োজনে ডেন্টাল ফ্লস/মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। তাছাড়া সাহ্?রির পর কুলিকুচি করে নিয়ে ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্যে প্রতিটি দাঁতের মধ্যবর্তী অংশ থেকে সূক্ষ্ম খাদ্যকণা বের করে আনুন। ৫) রোজাকালীন অজু করার সময় পানি দিয়ে দাঁত ভালোভাবে কুলকুচি করতে হবে। ৬) যারা দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন বা সম্প্রতি রুট ক্যানেল করিয়েছেন তারা রোজা রাখতে পারবেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ও পেইন কিলার ইফতার ও সাহরির মধ্যবর্তী সময়ে খেয়ে নিতে হবে।
৭) দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমলে দাঁতে ব্যথা হয়। যার কারণে রোজা রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
এমন হলে চিকিৎসক দেখিয়ে দাঁতের পুঁজ বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ৮) এই সময় দাঁত ব্রাশের নিয়ম ঠিকমতো না মানার ফলে খাবার জমে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ৯) ভিটামিন-স্বল্পতার কারণেও (বিশেষত ভিটামিন সি) মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়। ইফতারিতে প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবুর শরবত, জাম্বুরা, কমলালেবু, কামরাঙা, আমড়া, মাল্টা, আমলকী, আনারস, সেই সঙ্গে সালাদ যেমন গাজর, শসা, টমেটো, লেটুস পাতা ইত্যাদির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া ভালো।
১০) দাঁতের প্রদাহ, মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত আসা সহ মুখ ও দাঁতের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। রমজানে দাঁতের চিকিৎসা অনেকেই মনে করে থাকেন রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করা যায় না, বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। তবে, রোজা থাকাকালীন দাঁত তোলা বা রক্তপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এমন চিকিৎসা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট ফিলিং এসব চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে। তবে, সতর্ক থাকতে হবে যেন, অসাবধানতাবশত পানি বা কোনো কিছুর স্বাদ যেন ভেতরে চলে না যায়।
লেখক : ডেন্টিস্ট মো: শাহাদাত হোসেন
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালী।