সূর্য যেন হয়ে উঠেছে তেজি ঘোড়া। কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না তার দৌরাত্ম্যে। ফলে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশবাসী। গরম যখন পড়ছে মাত্রা ছাড়ানো তখন সুস্থ থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। গরমে প্রচুর ঘাম হয়। তাপের কারণে দেহে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। তাই গরমে শরীর যেন হাইড্রেট থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিন্ত করতে হবে পর্যাপ্ত শক্তি। তাহলেই গরমের সঙ্গে লড়াই করা সহজ হবে। গরমে সুস্থ থাকতে কী খাবেন চলুন জেনে নিই-
পানির বিকল্প নেই গরমে সুস্থ থাকতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তবে চিনি মেশানো শরবত বা পানীয় না খাওয়াই ভালো। সাধারণ পানিই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। চা/কফির মতো পানীয়ও গরমে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। তবে মনে রাখবেন, অতিরিক্ত পানিও পান করা চলবে না। মাত্রাতিরিক্ত পানি সেবন হাইপোনাট্রেমিয়া নামক সমস্যার কারণ হতে পারে। দিনে সর্বোচ্চ ৩ লিটার পানি পান করুন। কিডনির সমস্যা থাকলে এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শরীর ঠান্ডা রাখতে স্টার্চ ও জটিল শর্করা
গরমে সুস্থ থাকতে অবশ্যই তরল বা পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি যেসব খাবার দেহে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে সেগুলোও খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। এ সময় খেতে পারেন ওটস, লাল চিড়া ইত্যাদি। এগুলো জটিল শর্করা ও স্টার্চের ভালো উৎস। দীর্ঘসময় শরীর ঠান্ডা রাখে এসব খাবার। পাশাপাশি খেতে পারেন ইসবগুল, চিয়া সিড, তোকমা দানা, বার্লি। ওজনের তিনগুণ বেশি পানি শোষণ করে শরীর ঠান্ডা রাখে এসব উপাদান।
খেতে হবে পানিযুক্ত ফল আর সবজি
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর হাইড্রেট রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে খাদ্য। যেসব খাবারে সাধারণত বেশি পানি থাকে না- এমন প্রক্রিয়াজাত খাবার এ সময় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তার বদলে খেতে হবে পানি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল আর সবজি।
তরমুজ, বেরি, নাশপাতি, ডালিম, আপেল, পাকা পেঁপে, ঘরে তৈরি আখের রস, আঙুর, আনারস, কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি বেশি খেতে হবে। কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি এসব ফল দিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফলের রসের সঙ্গে তোকমা বা ইসবগুল মিশিয়ে নেবেন। এতে পেট ও শরীর ঠান্ডা থাকবে।
ফলের পাশাপাশি সবজিও খেতে হবে পানিযুক্ত। এক্ষেত্রে লাউ, পেঁপে, শসা, টমেটো, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, চালকুমড়া হতে পারে উপকারি বন্ধু। এছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলিতে প্রায় ৯১-৯২ শতাংশ পানি থাকে। খেতে পারেন লেটুস, পালং শাকও।
অন্ত্রের যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে
গরমে চাতক পাখির মতো পানির খোঁজে থাকেন সবাই। একটু স্বস্তি পেতে তাই রাস্তার পাশে বিক্রি করা বিভিন্ন পানীয় পান করেন। কিন্তু এসব পানীয় খুবই অস্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন হজমজনিত সমস্যা এবং টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ডায়রিয়া, আমাশয়, বদহজমের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় এ সময়। তাই তীব্র গরমে পেটের স্বাস্থ্যের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া আবশ্যিক।
এ সময় পেটের যত্নে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন প্রোবায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) সমৃদ্ধ খাবার। টক দই, মাঠা, আপেল, ইসবগুল ইত্যাদি। আরও খেতে পারেন ডাবের পানি, কাঁচা কলা, পেঁপে, চিয়া সিড, আদা, হলুদ চা, জিরাপানি, তুলসী চা, বার্লি, ওটস, মধু ইত্যাদিও। এছাড়া খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন ফর্মুলেটেড ফুড কারকুমা হেলদি গাট। অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেডের বাজারজাত এই পণ্যটি ইউএসডিএ অর্গানিক সার্টিফাইড এবং নন-জিএমও উপাদানে তৈরি। এটি প্রাকৃতিকভাবে পেটের খেয়াল রাখে, ভালো রাখে অন্ত্র বা গাট।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল খাবার : গরমে বেড়ে যায় প্রস্রাবের সংক্রমণ। তাই এসময় খাদ্যতালিকায় রাখুন দারুচিনি, রসুন, মধুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল খাবার। শরীর ঠান্ডা রাখতে খান পুদিনা আর আদা। গরমে সুস্থ থাকতে মসলাদার খাবার, প্রসেসড ফুড, ভাজাপোড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। চা/কফির মতো ক্যাফিনযুক্ত খাবার কম সেবনই মঙ্গলজনক হবে। পেট যেন ঠান্ডা থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।