ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা

সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা

গেল বেশ কিছুদিন ধরে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে বিষধর পোকাণ্ডমাকড় যেমন- সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি তাদের আবাস হারিয়ে উঁচু জায়গা খুঁজতে থাকে আর ঢুকে পড়ে মানুষের আবাসস্থলে। তখনই ঘটে সাপে কামড়ানোর ঘটনা। বিষধর সাপের কামড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর মূল কারণ সচেতনতার অভাব। ওঝা বা বেদের মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসা করা, রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করা এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসা না করানোর ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে যার মধ্যে ২৭ প্রজাতির সাপ বিষধর। সর্প দংশন পরবর্তী বিষক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটে অনেকের। সর্প দংশন সম্বন্ধে অনেক ভুল ধারণা এখনো সমাজে বিরাজমান। প্রয়োজন সচেতনা বাড়ানো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এসব কুসংস্কার রোধ করার জন্য। সাপে কাটার পর কী করবেন? প্রথম কাজই ভয় পাওয়া যাবে না। শান্ত থাকুন। বেশিরভাগ সাপ অবিষধর। এমনকি বিষধর সাপের দংশনেও অনেক সময় পর্যাপ্ত বিষ নাও থাকতে পারে। প্যানিক অ্যাট্যাকে অনেকে মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসংগত আচরণ, মূর্ছা যেতে পারেন। তাই যথাযথ আশ্বস্ত করুন। বিজ্ঞানভিত্তিক ও কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে এ ব্যাপারে বার বার অভয় দিন। তাতে রোগী বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে পারে। মারাত্মক বিষক্রিয়া হতে সময় লাগে। ততক্ষণে আপনি হাসপাতালে পৌঁছে যেতে পারবেন। দংশিত সাইট (হাত বা পা) নিশ্চল রাখুন। পায়ে দংশিত হলে হাঁটাচলা করবেন না। হাতে দংশিত হলে হাত নাড়াচাড়া করবেন না। বাঁশ, কাঠ বা শক্ত কিছু দিয়ে সিপ্লন্ট দেওয়া যেতে পারে। যেমন- দেওয়া হয় হাড় ভাঙলে। গিরা নাড়াচাড়া বা মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই যথাসম্ভব শান্ত ও ধীর থাকুন। সুতা, শক্ত নাইলনের রশি, তার ইত্যাদি দিয়ে গিঁট দেবেন না। এতে হিতেবিপরীত হতে পারে। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে হাতে পায়ে পচন ধরে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দেয় অনেকের। বিকলাঙ্গতা হতে পারে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও। গামছা বা চওড়া কাপড় দিয়ে হালকা একটি গিঁট দেয়া যেতে পারে। তবে এর ফলে বিষ অবরোধ করা যাবে বা গিঁটের উপকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ নেই। দংশিত স্থান সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। খালি হাতে ক্ষতস্থান ওয়াশ করবেন না। অন্তত হাতে বাড়তি পলিথিন মুড়িয়ে নিন। অ্যান্টিসেপটিক মলম থাকলে ক্ষতস্থানে লাগানো যেতে পারে। দংশিত স্থান কাঁটবেন না, সুঁই ফুটাবেন না, গাছ-গাছালির রস, গোবর, চুলার মাটি কিংবা কোনো প্রকার প্রলেপ দেবেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। মন্ত্রপড়া, পানি পড়া, ওঝা, বৈদ্য এসব অর্থহীন ও অকেজো চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন না। এতে সময় ক্ষেপণ হয় এবং এসব জটিলতায় রোগী হাসপাতালে গেলেও বিলম্বের কারণে অনেক সময় মৃত্যুবরণ করেন। মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা বা অ্যাম্বুলেন্স (সম্ভব হলে) এ দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করুন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এছাড়া বিষধর সাপের দংশনের ফলে ব্যথা, ফোলা, রক্তক্ষরণ, প্যারালাইসিস, শক, চোখ বুজে আসা, নাকি স্বরে কথা বলা, কথা বলতে অসুবিধা কিংবা মুখ দিয়ে লালা ঝরলে, কিডনি বৈকল্য ইত্যাদি ‘সিন্ড্রোম’ দেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সাপের বিষের ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে। অভিজ্ঞ ও কনফিডেন্ট চিকিৎসক রোগীর ‘সিন্ড্রোম’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডোজ (এক ডোজে ১০ ভায়াল, সকল বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রে) প্রয়োগ করবেন যথেষ্ট পর্যবেক্ষণে রেখে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডোজ ও লাগতে পারে। আবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ সব সর্প দংশনে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া অযৌক্তিক ও অযাচিত ব্যবহারের পর কিছু সিরামজনিত জটিলতা হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত