বহুমূত্ররোগ বা ডায়াবেটিস (যা ডায়াবেটিস মেলাইটাস নামেও পরিচিত) হলো একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেটি ঘটে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা দীর্ঘসময় ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কারণ হয় শরীর যথেষ্ট পরিমাণে বা কোনো ইনসুলিন উৎপাদন করে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। উপসর্গগুলো হলো ঘনঘন প্রস্রাব (পলিইউরিয়া), অত্যধিক তৃষ্ণা (পলিডিপসিয়া) এবং অত্যধিক ক্ষুধা (পলিফেজিয়া)। চিকিৎসা না করালে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
বহুমূত্ররোগের তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে :
১) টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় যখন অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় না। পূর্বে এটি ইনসুলিন-নির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা জুভিনাইল ডায়াবেটিস নামে পরিচিত ছিল। বিটা কোষ বিনষ্ট হওয়ার কারণ হলো অটোইমিউন বিক্রিয়া অটোইমিউনের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বিটা কোষ ধ্বংসের হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। এটি যে-কোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও তরুণদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। ১০-১৪ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই হার শিখরে পৌঁছে। ২) টাইপ ২ ডায়াবেটিস শুরু ইনসুলিন রোধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে কোষ ইনসুলিনের প্রতি যথাযথ সাড়া প্রদানে ব্যর্থ হয়। রোগের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইনসুলিনের ঘাটতিও তৈরি হয়। এটি পূর্বে ইনসুলিন-অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস মেলিটাস নামে পরিচিত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো শরীরের অত্যধিক ওজন ও কায়িকশ্রমের অভাব। ৩) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলো তৃতীয় প্রধান ধরন। এটি হয় যখন একজন গর্ভবতী মহিলা যার এর আগে কখনো ডায়াবেটিসের ইতিহাস ছিল না কিন্তু গর্ভধারণ করার পর রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা বেড়ে যায়।
যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
১) ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা; ২) দুর্বল লাগা-ঘোর ঘোর ভাব আসা; ৩) ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া; ৪) সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া; ৫) মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া; ৬) কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া; ৭) শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা; ৮) চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব; ৯) বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা; ১০) চোখে কম দেখতে শুরু করা।
গর্ভকালীন বহূমূত্ররোগ : গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিছুটা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনুরূপ। এতে ইনসুলিন ক্ষরণ ও সাড়াপ্রদান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ২-১০ শতাংশ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং প্রসবের পরে উন্নতি হতে পারে অথবা ভালো হয়ে যায়। সকল গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভধারণের ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রায়শই দেখা যায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমেস্টার বা ত্রিমাসে এটি বেশি হয় কারণ এই সময়ে ইনসুলিনবিরোধী হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের ৫-১০ শতাংশ প্রসবের পরে ডায়াবেটিসের অন্য ধরন, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।