মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে অর্থোপক্স ভাইরাস। এ জাতির ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে গুটিবসন্ত ও কাউপক্স। এজন্য মাঙ্কিপক্সের সাথে গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের মিল দেখা যায়। আবার মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের রয়েছে দুটো ক্লেড বা উপজাতি। একটি হচ্ছে মধ্য আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু তেমন হয়নি। ২০২২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সের নাম বদলে রাখে ‘এমপক্স’।
এ রোগ থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার উপায় : আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা। আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারী উভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা। সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড ধরে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/জীবাণুনাশক/ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা। আক্রান্ত জীবিত/মৃত বন্যপ্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পোষক (যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা। তবে সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী (যেমন : গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, মহিষ) থেকে এ রোগ ছড়ায় না।
এমপক্সের লক্ষণ : সাধারণত এমপক্সের জন্য, জ্বর, পেশিতে ব্যথা এবং গলাব্যথা প্রথমে দেখা দেয়। এমপক্স ফুসকুড়ি মুখের উপর থেকে শুরু হয় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিবর্তিত হয়- ম্যাকুলস, প্যাপিউলস, ভেসিকল, পুস্টুলস। ক্রাস্ট হওয়ার আগে ক্ষতগুলো কেন্দ্রে ডুবে যায়।
এমপক্স কীভাবে ছড়ায় : এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন। ২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা : রোগের উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবারের সদস্যসহ তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সে সম্পর্কে আরো বুঝতে বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন। এদের মধ্যে অল্পবয়সি শিশুরা থাকতে পারে। কারণ একদিকে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, অন্যদিকে অঞ্চলটির অনেকেরই পুষ্টির অভাব রয়েছে। ফলে রোগের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করা বেশি কঠিন হয়ে যায়। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ছোট শিশুরা যেভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে খেলাধুলা করে এবং একে অপরের সঙ্গে মেশে তার কারণে ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
এমপক্সের কোনো টিকা আছে : এমপএক্সের টিকা আছে, তবে যারা ঝুঁকিতে আছে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকছে কেবল তারাই এটি পেতে পারে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, যাদের প্রয়োজন তাদের সবার কাছে টিকা পৌঁছাবার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও জরুরি ব্যবহারের জন্য এমপক্সের টিকাগুলো দেয়ার জন্য সম্প্রতি ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।