ঢাকা ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার নীরব এক ঘাতক

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার নীরব এক ঘাতক

এক নীরব ঘাতক এর নাম উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার। দিনে দিনে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ আলোচনা করতে যাচ্ছি। ০-৯০% উচ্চ রক্তচাপের রোগীর কোনো লক্ষণই থাকে না। এ জন্য এটিকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। সারা পৃথিবীতে কমবেশি ১.২ বিলিয়ন হাই প্রেশারের রোগী আছে। এর মধ্যে ৫০-৬০% জানে তাদের এই রোগটি আছে।

বাকিরা জানেই না তাদের হাই প্রেশার। হাই প্রেশারকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় হাইপারটেনশান বলে। বিশাল সংখ্যক মানুষ তাদের হাইপারটেনশানের ব্যাপারে জানতে পারে যখন এরই মধ্যে এটি শরীরে বেশ কিছু বড়ো ক্ষতি করে ফেলেছে।

যখন কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, হার্টের সমস্যা দেখা দেয় কিংবা একটা স্ট্রোক হয়ে যায় তখনই ধরা পড়ে তার হাইপারটেনশান ছিল। প্রারম্ভিক পর্যায়ে হাইপারটেনশান নির্ণয় করতে- বশের উপর বয়স হলে দুবছরে অন্তত একবার এবং ত্রিশের উপর বয়স হলে প্রতি বছরে অন্তত একবার ব্লাড প্রেশার পরিমাপ করা প্রয়োজন। ব্লাড প্রেশার যদি লাগাতার ১৪০/৯০ মিমি মার্কারি বা তার বেশি থাকে কিংবা শুধু সিস্টোলিক ১৪০ মিমি মার্কারি বা তার বেশি থাকে কিংবা শুধু ডায়াস্টোলিক ৯০ মিমি মার্কারি বা তার বেশি থাকে, সেটিকে হাইপারটেনশান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তবে আমেরিকাতে এখন বলছে ১৩০/৮০-এর বেশি হলেই সেটিকে হাইপারটেনশান হিসেবে ধরতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে হাইপারটেনশানের কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন- মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি ও জোরে হাঁটলে বা একটু পরিশ্রমের কাজ করলে বুকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করা। হাইপারটেনশান রোগীর হার্টকে অতিরিক্ত লোডের বিপরীতে পাম্প করে রক্ত সারা শরীরে পাঠাতে হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে বুকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। আগে সহজেই ৪ তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়া যেতো, এখন উঠতে গেলে বেশ কষ্ট হয়ে যায়—অনির্ণীত বা অনিয়ন্ত্রিত হাইপারটেনশানের একটি বহিঃপ্রকাশ এটি হতে পারে।

এমন লক্ষণ ইশকেমিক হার্ট ডিজিজেও থাকে। হাইপারটেনশানের চিকিৎসায় দক্ষ ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন চিকিৎসকরা অনেকক্ষেত্রেই কম্বিনেশান ওষুধ (একাধিক ওষুধ) ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কম্বিনেশান ওষুধগুলোতে ব্যবহৃত ওষুধগুলো সাধারণত কম ডোজের হয়। ফলে একাধিক ওষুধের ভালো দিকের সুবিধা যেমন পাওয়া যাচ্ছে আবার সাইড ইফেক্টও কম হচ্ছে। আবার একাধিক ওষুধের সাইনারজিস্টিক একশানে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রিত থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বিটা ব্লকার এখন আর মোটেও হাইপারটেনশান চিকিৎসার প্রথম সারিতে নেই। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। কিন্তু রোগীর হাইপারটেনশানের সঙ্গে যদি হার্ট ডিজিজ থাকে তাহলে বিটা ব্লকার সোজা এক নাম্বার পছন্দে চলে আসবে। হার্ট যদি কাজ না করে ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল হলেই কী আর না হলেই কী! হাইপারটেনসিভ রোগীর যদি মাইগ্রেন থাকে সেক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে আবারো বিট ব্লকার উঠে আসবে।

খন সাথে যদি হার্টের সমস্যা থাকে (Left ventricular dzsfunction), তাহলে বিটা ব্লকার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়বে। হার্ট ফেইলিওরে ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার দেয়া যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে কম ডোজে বিসোপ্রলল বা নেবিভলল উপযুক্ত ওষুধ হতে পারে। এসব ওষুধের ব্রঙ্কোস্পাজম করার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম থাকে। এগুলো সিলেক্টিভ বিটা-ওয়ান ব্লকার। কার্ভিডেলল কিন্তু নন-সিলেক্টিভ বিটা ব্লকার। এতে ব্রঙ্কোস্পাজম হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। জমা/সিওপিডি রোগীর তাহলে বিভিন্ন কারণে একই সাথে হাইপোক্সিয়া, ইশকেমিয়া ও পটাশিয়াম লস হতে পারে। এই তিন মিলে এরিদমিয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে কম ডোজে স্পাইরোনোল্যাকটোন বা এপলিরেনোন (মিনারেলোকর্টিকয়েড রিসেপ্টর এন্টাগনিস্ট) যোগ করে দেয়া এক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। এরা ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করবে, আবার পটাশিয়ামও রিটেইন করে, ফলে এরিদমিয়ার চান্স কমায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত