এক অসয্য যন্ত্রণার নাম কোমর ব্যাথা
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ডা. মো. জাহিদুর রহমান
কোমর ব্যাথা আমাদের বেশিরভাগ বয়স্ক লোক ও মা বোনদের খুবই কমন একটি সমস্যা। কখনো কখনো কোমর থেকে পায়ে ব্যাথা হয়। শতকরা ৯০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভোগে। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা এক মাসের অধিক সময় থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
কীভাবে বুঝতে পারবেন : প্রথম দিকে কোমর ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে। প্রাত্যহিক কাজে যেমন-ঘর মোছা, দীর্ঘক্ষণ কোমড় ঝুকে কাজ করা, ভারী কাজ করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।
কোমর ব্যাথার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ : যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে। বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেয়া উচিত। যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত দেহের ওজন বৃদ্ধির কারণে কোমর ব্যাথা হতে পারে। মায়েদের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সিতে সিজারিয়ান ডেলিভারির কারণে কোমর ব্যাথা হতে পারে। জীবন যাপনে স্বাভাবিক মুভমেন্ট না করলে।
প্রাথমিক ক্ষেত্রে করণীয় : সব সময় শক্ত সমান বিছানায় ঘুমাতে হবে। ফোমের বিছানায় ঘুমানো যাবে না এবং ফোমের নরম সোফায় অনেকক্ষণ বসা যাবে না। ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না। ঘাড়ে ভারী কিছু তোলা থেকে বিরত থাকুন। নিতান্তই দরকার হলে ভারী জিনিসটি শরীরের কাছাকাছি এনে কোমরে চাপ না দিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। নিয়মিত শারীরিক অর্থাৎ কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। শারীরিক শ্রমের সুযোগ না থাকলে ব্যায়াম অথবা হাঁটার যতটুকু সুযোগ আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। মোটা ব্যক্তির শরীরের ওজন কমাতে হবে। সবার ক্ষেত্রেই সবসময় ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকা যাবে না। ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে। বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। ঘুম থেকে ওঠার সময় যে কোনো একদিকে কাত হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। গুরুতর অবস্থায় করণীয় অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসকের দ্বারা রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, লাম্বার ট্রাকশন ও বিভিন্ন ব্যায়াম করাতে হবে। দীর্ঘদিন মেডিসিন চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর মেরুদণ্ডের অপারেশন বা সার্জারির প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা : হালকা ব্যথা হলে অবহেলা না করে ওষুধ এবং পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। কোমরে গরম ভাপ দিলে উপকার পেতে পারেন। কোমর ব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করা যাবে না। ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। এক্ষেত্রে তিন/চার সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হতে পারে। কম ব্যথা হলে আউটডোর ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে। এটা একেবারে ঠিক নয়।
বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন। ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো এমন ওষুধ তৈরি হয়নি যে ওষুধ খেলে আপনার মাংসপেশি লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে। থেরাপি বা এক্সারসাইজ এ মেডিসিন যা আপনাকে ওই কষ্টগুলো থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে সঠিক মোবিলাইজেশন, মেনুপুলেশন, স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্দেনিংয়ের মতো চিকিৎসা করতেই হবে।