বায়ুদূষণে শারীরিক বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যার মধ্যে অন্যতম হলো হৃদরোগ। বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট’ এর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাতাসে ভাসমান অতি সুক্ষ্ম ধূলিকণা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেকটাই। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু হৃদরোগের কারণে সারা বিশ্বে ১.৭ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। তার ১৯ শতাংশের কারণ হলো বায়ুদূষণ। এই অকাল মৃত্যুর নাম দেয়া হয়েছে ‘পিএম ২.৫’। ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুসারে, ধূলিকণা ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে মস্তিষ্কেও। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু না হলেও, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ হচ্ছে বাতাসের মারাত্মক এই দূষণ। বিভিন্ন গ্যাসের পাশাপাশি বাতাসে দূষণে অন্যতম দায়ী হলো কিছু ভাসমান কণা। এই দূষণ কণাগুলোকে বলা হয় পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম। মূলত যে দু’টি কণাকে বায়ুদূষণে সব থেকে বেশি দায়ী করা হয়, সেগুলো হলো পিএম ১০ ও পিএম ২.৫। এই কণাগুলো মাপের একক হলো মাইক্রোমিটার। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, দৈনিক প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫ এর পরিমাণ থাকে যথাক্রমে ১০০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়। গবেষণা জানাচ্ছে, অতিসূক্ষ্ম বলেই পিএম ২.৫ নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। এতদিন দেখা গেছে তা রক্তে মিশে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ে। ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা ভাসমান ধূলিকণার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে থাকে। শীতে বড় শহরগুলোতে বাতাসের গুণগত মানের অনেকটাই অবনতি হয়।
শরীরে প্রবেশের পরে এই ধূলিকণা কী করে?
গবেষকেরা বলছেন, শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে এই কণাগুলো সরাসরি হৃদযন্ত্রের পেশি ও হৃদপিণ্ডের রক্তনালিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। সেটাই হৃদরোগের আশঙ্কা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা বাড়লে শরীরে গ্যালেক্টিন প্রোটিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যার ফলে হৃদযন্ত্র তার নমনীয়তা হারায়, কখনো কখনো গভীর ক্ষতও তৈরি করে।
একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস’। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণ ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদ্মিয়া’র ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হৃদস্পন্দনকে অনিয়মিত করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মানুষের হৃদযন্ত্র মিনিটে ৬০-১০০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে, যাকে বলে সাইনাস নোড। এর কাজ হলো হৃদস্পন্দন তৈরি করা। বায়ুদূষণ এই সাইনাস নোডেরও ক্ষতি করে। হৃদরোগের বাড়বাড়ন্ত ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে এটি একটি বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ সবের ক্ষেত্রে এই দূষণকণাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।