পরিবর্তনশীল ঋতু অনেকের পছন্দ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অনেক ঝামেলাও নিয়ে আসে সঙ্গে করে। বিশেষ করে শীতকালে (Winter)। শীতকাল অনেকের পছন্দের ঋতু। শীত এলেই পরিবেশে আর্দ্রতা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই আর্দ্রতায় ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের মতো অণুজীবগুলি বৃদ্ধির ভালো সুযোগ পায়। ফলে এই সব জীবাণু মানুষের মধ্যে অনেক রোগের জন্ম দেয়। আবার এর পাশাপাশিই শীতের আগমনে শরীরেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলিকে উষ্ণ রাখতে আরো শক্তির প্রয়োজন হয়। এর জন্য অনেক ধরনের ঘাটতি ও রোগ হতে থাকে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই শীতে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশে প্রতি আটজনে একজন মানসিক রোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভোগা ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না দেশে নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে ১ জন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বেশি মানুষ। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে মানসিক রোগ নিয়ে বেশি সংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা দেখা যায়। এমনকি সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসার হার ২ শতাংশেরও কম। এছাড়া প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রায় ৮০ লাখ মৃত্যু (১৪.৩ শতাংশ) মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশ্বজুড়ে ৯৭ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতা বা মাদক ব্যবহারজনিত সমস্যায় ভুগছেন। আবার এ খাতে দক্ষ জনবলেরও স্বল্পতা আছে। আর বিষয়টিকে সঠিক গন্তব্যের দিকে নিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। হতাশার দিক চিহ্নিত করে তারা বলেন, দেশের কত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে, তার সঠিক তথ্য নেই। জনশুমারিতে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ সমূহ : জেনেটিক (পিতা-মাতা বা পূর্ব পূরুষদের মস্তিষ্ক বিকৃতি থাকলে অনেক সময় সন্তানদেরও মানসিক রোগ প্রকাশ পায়), শরীরে কোনো কঠিন ব্যাধি, অতিরিক্ত নেশা, মস্তিষ্কে আঘাত লাগালে, হঠাৎ ভয় পেলে, মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অত্যধিক আনন্দ, দুঃখ, নিরাশ, পরিবেশগতভাবে, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। লক্ষণ সমূহ : একজন লোক মানসিকভাবে সুস্থ কিংবা অসুস্থ খুব সহজে বুঝা যায় না। অনেক মৃদু রকমের মানসিক রোগ আছে, যেগুলো খুব সহজে ধরা পড়ে না, যেমন-অ্যাংজাইটি, হালকা বিষণ্ণতা। আমরা যদি লক্ষ করি যে, দৈনন্দিন জীবনের ক্রিয়াকলাপ, আচার-আচরণ এগুলো ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। এত সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং অন্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এটি নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি দিন থাকছে। তখন মানিক রোগ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। যেমন-একটি লোক হয়তো বেশি কথা বলছে, রাগ বেশি করছে, বেশি টাকা খরচ করছে, অন্যের সঙ্গে বেশি খারাপ কাজ করছে। এটা দুই-তিনদিন হয়তো অন্যরা মেনে নিবে, কিন্তু এটি যদি ক্রমাগতভাবে দুই মাস ধরে অব্যাহত থাকে, তখন এটিকে আমরা মানসিক রোগ বলি।’
মানসিক রোগীকে মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- মৃদু ও মাঝারি বা তীব্র আকারের মানসিক রোগ। মৃদু রোগী হলো-অ্যাংজাইটি, মন খারাপ, নিদ্রার সমস্যা ও কিছুটা বিষণ্ণতা। এতে রোগীর খুব বেশি অসুবিধা হয় না। তীব্র আকার রোগী যারা, তাদের জ্ঞান লোপ পায়, আচরণ অত্যান্ত রুঢ় হয়ে যায়, অনেক সময় ভাঙচুর করে। এ সময় অনেক অভিভাবক রোগীকে চিকিৎসার জন্য না এনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। এটি ঠিক নয়।’
মানসিক রোগের প্রকারভেদ : মানসিক রোগ কত প্রকার মোটা দাগে ভাগ করলে মানসিক রোগ দুই প্রকার: (১) নিউরোসিস (২) সাইকোসিস। নিউরোসিস এ রোগটি মৃদু ধরনের মানসিক রোগ, অনেক মানুষের মধ্যে বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। রোগীর ব্যবহার ও আচরণ পরিবার বা সমাজের জন্য হুমকির কারণ হয় না।
সামান্য ওষুধ চিকিসা ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে প্রতিকার করা যায়। তবে এ রোগ বারবার হওয়ার প্রবণতা বেশি। সাইকোসিস এ রোগটি জটিল ধরনের মানসিক রোগ, কম সংখ্যক লোক এ রোগে ভুগে থাকেন। চিকিৎসা মোটামুটিভাবে ফলদায়ক। সাইকোসিস রোগটি বারবার ফিরে আসার প্রবণতা নিউরোসিস রোগের চেয়ে কম। দুশ্চিন্তা, টেনশন, ফোবিয়া, অবসেশন, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি নিউরোসিস রোগের উদাহরণ, অপরদিকে বিষণ্ণতা ও সিজোফ্রেনিয়া সাইকোসিস রোগের উদাহরণ। পরিশেষে বলতে চাই, যে কোনো অসুস্থতা থেকে মুক্তিলাভের জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। মানসিক অসুস্থতাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদের প্রয়োজন মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে এসে এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানলাভ করা এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানো। আমাদের উচিত মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সবধরনের সমর্থন দেয়া। তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করে সহানুভূতিশীল আচরণ করা এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।