ঘুমহীন রাতের পরদিন কাজের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন কাজের কারণেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কাজের ধরনের ওপরেও যে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, এমনই তথ্য উঠে এসেছে ‘আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনয়ের করা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায়। ‘জার্নাল অফ অকুপেশনাল হেলথ সাইকোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, যারা অতিমাত্রায় সারাদিন বসে কাজ করে তাদের ‘ইনসমনিয়া’ বা অনিদ্রা রোগে ভোগার উচ্চ সম্পর্ক রয়েছে। প্রধান গবেষক ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডার মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ক্লেয়ার স্মিথ সিএনএন ডটকমকে বলেন, ‘আমার জানি যে কর্মীদের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ‘ম্যাজিক বুলেটয়ের মতো কাজ করে ঘুম। তবে কাজের ধরন ঘুমের অবস্থা খারাপ করতে পারে।’
কাজ যেভাবে ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে : গবেষককরা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল মিডললাইফ ইন দ্য ইউনাইটে স্টেটসয়ের তথ্য থেকে ১ হাজার কর্মীর তথ্য নিয়ে ১০ বছর ধরে এই পর্যবেক্ষণ চালায়। পরীক্ষা করা হয় কাজের ধরন, কর্মীদের ঘুমের পদ্ধতি। এ সব পর্যালোচনার জন্য নীরিক্ষা করা হয় কাজে কী পরিমাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শারীরিক কর্মকাণ্ডে মাত্রা ও কাজের সময়, বিশেষ করে দিনের বেলা কর্মীরা কী ধরনের কাজ করছেন। গবেষণার শুরুতে (২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত) অংশগ্রহণকারীরা তাদের ঘুমের অভ্যাস সম্পর্কে জানায়। পরে আবার (২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত) তারা স্বাস্থ্যের ছয়টি নির্দেশক অনুযায়ী তথ্য প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে- কতক্ষণ ঘুম হচ্ছে, নিয়মিত ঘুম হচ্ছে কিনা, ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা লক্ষণ, ন্যাপ বা স্বল্প ঘুম দেয়ার অভ্যাস, দিনের বেলায় অবসাদ বোধ এবং ঘুমিয়ে পড়তে কতক্ষণ সময় লাগছে। ১০ বছর ধরে এভাবে অনুসরণ করে গবেষকরা স্বাস্থ্যকর ঘুমের তিনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করেন। সেগুলো হল- ‘গুড স্লিপার্স’, ‘ইনসমনিয়া স্লিপার্স’ এবং ‘ক্যাচণ্ডআপ স্লিপার্স’। যারা ‘গুড স্লিপার্স’ তারা সবচেয়ে ভালো ঘুম দেয়। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ঘুমচক্র এবং দিনের বেলায় কম ক্লান্ত বোধ করা। ‘ইনসমনিয়া স্লিপার্স’ যারা, তাদের ঘুমচক্র অল্প এবং দিনে উচ্চমাত্রায় অবসাদ বোধ করে। ‘ক্যাচণ্ডআপ স্লিপার্সরা এই দুই দলের মধ্যবর্তী অবস্থানের রয়েছে। যারা প্রায়ই দুপুরে ‘ন্যাপ’ বা স্বল্প ঘুম দেয় বা অনিয়মিত ঘুমের ক্ষতি পোষাতে সপ্তাহিক ছুটির দিনে অতিরিক্ত ঘুমায়। অপ্রচলিত কর্মঘণ্টায় কাজ করে, বিশেষ করে যাদের সারারাত জেগে কাজ করতে হয়, তাদের মধ্যে ৬৬ শতংশ ‘ক্যাচণ্ডআপ স্লিপার্স’ বিভাগে পড়ে যায়।
ঘুম উন্নত করতে যা করা যায় : স্মিথ বলেন, ‘কাজ পরিবর্তন করা হতে পারে একটা উপায়। তবে সম্ভব হলে কাজের সঙ্গে সারাদিনের সমন্বয় ঘটাতে পারলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেশি উপকার যেতে পারে।’ যারা সারাদিন বসে কাজ করেন, তাদের উচিত হবে সারাদিনে কয়েকবার নড়াচড়া করে। যেমন- অফিসেই কিছুক্ষণ পায়চারি করা, লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা। এই ধরনের কাজগুলো শারীরিকভাবে কিছুটা ক্লান্তি আনবে যা রাতের ভালের ঘুমের সহায়ক হবে। বুয়েনাভের পরামর্শ দেন, ‘নড়াচড়া করার কথা যাতে ভুলে না যান সেজন্য মোবাইল ফোটে অ্যালার্ম দিয়ে রাখা যেতে পারে।’ এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহার অন্তত দুই ঘণ্টা আগ থেকে বন্ধ রাখার কথাও বলেন তিনি। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে যন্ত্রগুলোতে ‘ব্লু-লাইট ফিল্টার’ ব্যবহার করতে হবে। এতে দেহের ঘুম-জাগরনের ছন্দ ব্যাঘাত ঘটবে না। তবে যারা বাজে ঘুমের অভ্যাসে পড়ে গেছেন তাদের হতাশ না হতে পরামর্শ দেন এই অধ্যাপক।